“একনেক”-এ ৫ হাজার ডিজিটাল ল্যাবসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন

1595920022.PID7413

“একনেক”-এ ৫ হাজার ডিজিটাল ল্যাবসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন করে  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার বলেন প্রধানমন্ত্রী ।

করোনা সংকটে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয় সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক করোনা ভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তারপরও আমাদের কৃষির যে অগ্রগতি এটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের মানুষের আর যাই হোক তাদের খাদ্যের অভাবটা যেন না হয়। সেটা আমাদের দেখতে হবে।

তিনি বলেন, খাবারের ব্যবস্থাটা যদি আমরা ঘরে রাখতে পারি। তাহলে অন্য কোনোদিকে খুব একটা সমস্যা হবে না। আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

নগদ অর্থসহায়তা, কৃষকদের সার, উন্নতমানের বীজসহ অন্য কৃষি উপকরণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এটাই আমাদের কাজ।

করোনা সংকটকালীন যারা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য উৎপাদন, বিশেষ করে ধান কাটার ব্যাপারে আমাদের সংগঠনের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন, আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগ প্রতিটি নেতা-কর্মী তারাও কিন্তু মাঠে নেমে গেছে। নিজের হাতে ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিয়েছে। এই কাজ করতে যেয়ে আমাদের অনেকে কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে মৃত্যুবরণও করেছে। যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজিও আমরা অর্জন করবো। বিশেষ করে এসডিজির ১৭টি মূল নির্দেশনা রয়েছে। তার মধ্যে যে কয়টা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য, আমাদের সবগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করার দরকার নেই। ঠিক যে কয়টা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন সেগুলো আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় সেগুলো আমরা সংযুক্ত করে নিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা তা অর্জন করতে পারবো। এটা ঠিক করোনা ভাইরাস আমাদের অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে।

দেশে ৫ হাজার ডিজিটাল ল্যাবসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ৩ হাজার ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।অনুমোদিত সাত প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে নতুন করে স্থাপন করা হবে পাঁচ হাজার ডিজিটাল ল্যাব। এর মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আইসিটিতে দক্ষতা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক আইসিটি সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্কুল অব ফিউচার নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় কনটেন্ট তৈরি সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) শেরেবাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে আইসিটি অধিদফতর। প্রকল্পের আওতায় প্রাতিষ্ঠাকি পরামর্শকের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটা বাবদ ৬৪৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ল্যাব ও পিআইইউ স্থাপন বাবদ ১৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনা বাবদ ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ বাবদ ১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হবে। এসব ল্যাবে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার প্রস্তুত করা, পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ, ৩৬ হাজার ২০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া, আইসিটি বিষয়ে ৬০টি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি এবং কমিউনিকেটিভ ইংলিশ বিষয়ে ৮০টি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনা, ভাষাগুরু সফটওয়্যার ভার্সন-২ তৈরি, ৬৪টি সেমিনার বা কর্মশালার আয়োজন এবং বৈদেশিক ও স্থানীয় প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।

এছাড়া ৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনর্বাসন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তুলার গবেষণা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মেহেরপুর মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েঠে ২৩১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একনেক সভায় ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট প্রকল্প থেকে ৪৬০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে ১২৫ কোটি টাকা কমিয়ে ৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।

একনেক সভায় এনইসি মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন থেকে একনেক সভায় যুক্ত হন।

Pin It