নভেল করোনাভারাইরাসের আতঙ্কে খাদ্যপণ্য ঘরে মজুদ করে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশে খাদ্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ থাকার পাশাপাশি কমপক্ষে এক বছর বিদেশ থেকে আমদানির সামর্থ্যও রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসে দেশে একজনের মৃত্যুর পর জনসমাগমের মতো অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় ‘লকডাউনের’ আতঙ্কে বাজারে চলছে অস্থিরতা।
আতঙ্কিত হয়ে অনেকে মাসখানেকের পণ্য কিনতে থাকায় বাজারে পণ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে; অতিরিক্ত চাহিদায় চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম গেছে বেড়ে।
শনিবার ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি ধরে বলেন, “দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক সমানে জিনিসপত্র কিনে মজুদ করছেন বা ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। একজন দেখলাম ৩০ কেজি লবণই কিনে ফেলেছেন! এই ৩০ কেজি লবণ দিয়ে উনি কতদিন খাবেন, আমি জানি না। আর সেটা দিয়ে উনি কী করবেন?
“পেঁয়াজের একবার দাম বাড়ার কারণে অনেকে প্রচুর পেঁয়াজ কিনে মজুদ করেছিলেন। ফলাফল এই হয়েছিল সেগুলো পচে যাওয়াতে ফেলে দিতে হয়েছিল।”
তাই বাজারে চাপ না ফেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কাজেই আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে যার যতটুকু প্রয়োজন, সেইটুকু আপনারা সংগ্রহ করেন।
“এইভাবে যদি বাজারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, বাজার তখন জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। যার টাকা আছে সে তো কিনতে পারছে, কিন্তু যারা সীমিত আয়ের, তাদের পক্ষে তো এত কেনা সম্ভব না। কাজেই অন্যকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কারও নাই।”
খাদ্য পণ্য মজুদের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখনও ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য শুধু সরকারি গুদামেই আছে। সাড়ে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন গম আমাদের মজুদ আছে। এছাড়াও বেসরকারি আমাদের যে সমস্ত রাইস মিলগুলো আছে, তাদের কাছেও প্রচুর খাদ্য মজুদ আছে। তাছাড়া আমাদের ক্ষেতের ফসল আছে।
“আমাদের যে রিজার্ভ আছে, তাতে অন্তত এক বছরের খাবার ক্রয় করার মতো সামর্থ্য আমাদের আছে। কাজেই সেদিক থেকেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়র কোনো কারণ নেই।”
বাজার সহনীয় রাখতে সরকার নজরদারি চালাচ্ছে জানিয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর বাংলাদেশে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন তিনি।
“যখন থেকে চায়নায় এটা দেখা গেল, সাথে সাথেই আমরা কিন্তু সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি এবং ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ছিল ওখানে। তাদের ফিরিয়ে এনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে তারপর তাদেরকে আমরা ছেড়েছি। যারা বিদেশ থেকে আসছে, আমরা তাদের পরীক্ষা করছি এবং যার ভেতরে এতটুকু সন্দেহ হচ্ছে তাদেরকে কোয়ারান্টিনে থাকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।”
বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, “তাদের আমরা এটুকু বলব যে তাদের নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, স্ত্রী, ভাই-বোন তাদের সকলের নিরাপত্তার জন্য অন্তত ১৪টা দিন কোয়ারেন্টিনে থাকা .. তার দ্বারা পরিবারের সদস্য এবং সাধারণ জনগণ কেউ যেন সংক্রমিত না হয় সে ব্যাপারে তাদের নিজেদেরকেই সতর্ক থাকতে হবে।”
দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যতদূর সম্ভব নিজের ঘরে থাকেন, আর নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন।”
প্রতিনিয়ত টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে সতর্কতামূলক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি শুধু এইটুকু আশা করব যে আমাদের দেশবাসী তারা যেন এটা মেনে চলেন।”
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কয়েকটি হাসপাতালও একেবারে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী হলে সেখানে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাক্তার নার্সসহ ওখানে যারা কর্মরত তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করছি।
“সবচেয়ে দুঃখজনক যে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব, অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও যেখানে লোক সমাগম হবে আমরা সেটাও কিন্তু বন্ধ করে দিয়েছি। কাজেই আমরা যে কতটা গুরুত্ব দিয়েছি, সেটা আপনারাই অনুধাবন করতে পারেন।”
আগামীতেও জনসমাগমের মতো অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার কথা বলেন তিনি।
“বিশেষ করে ২৬শে মার্চ আমাদের পুষ্পমাল্য অর্পণের কথা আমাদের সাভার স্মৃতিসৌধে। আমি আলোচনা করব। সেটাও আমাদের স্থগিত করে রাখতে হবে।
“নিজের মতো করে, আমরা স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো। কিন্তু এই লোক সমাগমটা আমাদের বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে কোনোভাবে এই সংক্রামক ব্যাধি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।”