কারা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের চরম অবণতি ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বুধবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য যে, কারা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে উদাসীন।
“গতকাল দেশনেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেছেন, তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি কোর্টের মধ্যে দেখেছি তিনি মাথা সোজা করে রাখতেই পারছেন না, পা বাঁকা করে রাখতে পারছেন না। তিনি কোনো রকমের সুস্থ অবস্থায় নেই।”
গত ১৯ মার্চ কারাগারের ভেতরে স্থাপিত একটি মামলার শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল মহাসচিবের।
পরদিন দলীয় এক কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল জানিয়েছিলেন, বিএনপি প্রধানকে তিনি এতটাই অসুস্থ দেখেছেন যে, তিনি মাথা সোজা করে বসতে পারছিলেন না, তার সমস্ত শরীরে যন্ত্রণা-ব্যথা, কিছু খেতে পারছিলেন না।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধীদলীয় নেতা, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো রকমের চিকিসা দেওয়া হচ্ছে না। তাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা বার বার বলেছি, এর দায়-দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে বহন করতে হবে।”
অবিলম্বে খালেদা জিয়ার সুচিকিসার জন্য তার পছন্দমতো হাসপাতালে স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে, এখন কারাগারের কক্ষেও চলাচল করতে পারছেন না। তাকে সবসময়ই সাহায্য করতে হচ্ছে। সীমাহীন যন্ত্রণার মধ্যে প্রতিটি ক্ষণ ও প্রতিটি মুহূর্ত পার করছেন।”
ফখরুল অভিযোগ করেন, হাই কোর্টের আদেশে গত অক্টোবরে চিকিৎসার জন্য খালেদাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হলেও কোনো তাকে ৮ নভেম্বর মেডিকেল বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ৮ নভেম্বর থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন মাস কোনো চিকিসক তাকে দেখেননি বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর গত ২৪ ফেব্রয়ারি আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখে আসার পর যে প্রতিবেদন দেয় তা পড়ে শুনিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা শুনলে অবাক হবেন, মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দেওয়ার পরে বলা হল যে, তার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে জরুরিভাবে।
“তারা (মেডিকেল বোর্ড) এর মধ্যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরপর অনেক বলা-কওয়ার পর ১৯ মার্চ তার রক্ত নেওয়ার জন্য কারাগারে তারা লোক পাঠাল। রক্ত নিয়ে আসা হলো বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা করতে। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বোর্ড কোনো মিটিং করেনি এবং এই রক্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনো কথা বলেনি এবং দেশনেত্রীর সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের ও মেডিকেল বোর্ডের কেউ দেখা পর্যন্ত করতে যায়নি।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনিসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাক্ষাতের পরও খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ কারা কর্তৃপক্ষ নেয়নি বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কুদ্দুস, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।