সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।
পিরোজপুরে সরকার দলীয় এক সাবেক সাংসদ ও তার স্ত্রীকে জামিন দেওয়া নিয়ে নাটকীয়তার প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার এক আলোচনা সভায় মওদুদের এমন মন্তব্য আসে।
মওদুদ আহমদ বলেন, “এই যে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত পারছি, আমরা আইনজীবীরা… আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সাধন করতে।
“কিন্তু পিরোজপুরের ঘটনার পর কারো মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকা উচিৎ নয় যে সরকারের ইচ্ছা ব্যতীত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি জামিনে কোনো দিন হবে না।”
সরকার বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে অভিযোগ করে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার যদি ইচ্ছা করে আদালত তাকে জামিন দেবেন। কারণ আদালতের স্বাধীনতা এখন নাই, বিচারকের স্বাধীনতা নাই, সরকারের ইচ্ছায় চলে। পিরোজপুরের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।
“পিরোজপুরের এই ঘটনা দেখে মানুষের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন এই সরকারের আমলে তাদের ইচ্ছা ছাড়া কোনোদিন হবে না।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, “তাহলে কী করতে হবে? যেটা আপনারা সবাই বলেছেন, আমরাও বলছি-আন্দোলন। আমি বিশ্বাস করি এই আন্দোলন হবে।
“আজকে সেজন্য জাতীয়ভাবে সকল গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পরিবর্তন আনতে হবে, এই সরকারকে দেশের মানুষ চায় না। আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা সকলে মিলে বাংলাদেশের একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি।”
গত ৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান দুর্নীতির মামলায় পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে তার বদলির আদেশ আসে। তিনি দায়িত্ব হস্তান্তরের পর বিকালে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের দুই মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।
খালেদার অন্যতম আইনজীবী মওদুদ বলেন, “আমরা গত ১১ বছর যাবত বলে এসেছি যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই, বিচারকদের স্বাধীনতা নাই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকতে পারে না, সেজন্য গণতন্ত্র নাই- এটা আমরা বলে এসেছি।
“আজকে খবরের কাগজ পড়ে দেখেন, সব কাগজে লিখেছে যে, পিরোজপুরে যে ঘটনা ঘটেছে যে, তাতে দেখে মনে হয় যে এখন দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। কেন? গত ১১ বছরই তো নাই। এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যেখানে আমরা দেখেছি যে, বিচারকদের কোনো স্বাধীনতা নাই।”
তিনি বলেন, “এসকে সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) চলে যাওয়ার পর ১১ ডিসেম্বরে যে কালা গেজেট প্রকাশিত হয়েছে সেই গেজেট অনুযায়ী বিচার বিভাগকে মানে নিম্ন আদালতকে প্রশাসনের অধঃস্তন করা হয়েছে একেবারে লিখিতভাবে আইন করে। এখন বিচার বিভাগ বিশেষ করে নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনের অধীনে অর্থাৎ রাজনৈতিক ইচ্ছায় চলে।”
সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছে মন্তব্য করে মওদুদ বলেন, সেজন্যই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল, সেটা ছিল নির্বাচন কমিশনের প্রতি ‘অনাস্থার’ প্রকাশ।
“একজন মেয়র হয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশ ভোটে, আরেকজন হয়েছেন ১৭ শতাংশ ভোটে। লজ্জার বিষয়, তারা মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন মানুষের এই সামান্য ভোটে। তার মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদেরকে ভোট দেয় নাই, ভোট কেন্দ্রে যায়নি।
“আওয়ামী লীগেরই ৪৫ শতাংশ না কি সাপোর্টার আছে, ভোটার আছে- এরা কেন গেল না ভোট কেন্দ্রে? এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ নির্বাচন বিমুখ হয়ে গেছে- এর চাইতে বড় ট্র্যাজেডি আর হতে পারে না।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘নাগরিক অধিকার, ন্যায় বিচার এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, “আজকে আইন ও বিচার বিভাগ নিহত, আমরা আহত। কোর্ট-কাচারিতে যাইয়া দেন-দরবার কইরা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির সমস্যাটা কী? একটা পত্রিকায় নিউজ করেছে, উনি টাকায় হাত দেন নাই, তবে দুর্নীতি করছে। কীভাবে? শুনলে হাসি পায়।
“পিরোজপুরের ঘটনা দেখে এটা আসলে বউকে মেরে শাশুড়িকে বা শাশুড়িকে মেরে বউকে ভয় দেখানো; তোমরা বিচারকরা যদি কেউ সরকারের লোকের বিরুদ্ধে রায় দাও তাহলে তোমাদের এই অবস্থা হবে।”
তিনি বলেন, “পিরোজপুরের ঘটনা বিচার বিভাগ বা উচ্চতর আদালত কীভাবে দেখবে আমি জানি না। পিরোজপুরের ঘটনায় বিচার বিভাগের দুরাবস্থা বোঝা যায়। রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নাই। প্রশাসনিক বিভাগের অধীনে হল রাষ্ট্র, আমরা সবাই। একজন দলীয় লোককে মুক্তি দেওয়ার জন্য একজন জজ বদলির পরে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়। কোথায় আছি আমরা!”
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “একটা সরকার মানবতার সাথে কী ধরনের পরিহাস করতে পারে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস তার প্রমাণ। দেশ তো এখন পাপিয়াদের, বেগম জিয়ার না। দেশ এখন প্রিন্সদের, দেশ এখন ক্যাসিনো চালায় যারা তাদের। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন না, যাদের মনে কোনো প্রেম নাই, প্রীতি নেই, ভালোবাসার অনুরণন নেই, বাংলাদেশ আজ তাদেরই দখলে।”
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বাবুলের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা বক্তব্য দেন।