খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিএনপি নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা তিনি শুনলে নিজেই ক্ষুব্ধ হতেন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরনো যে শারীরিক সমস্যাগুলো ছিল- সেগুলোই মাঝেমধ্যে বাড়ে বা কমে, ‘নতুন কোনো সমস্যা’ তার নেই।
রোববার তথ্য মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত ১ এপ্রিল তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ হলে খালেদা জিয়াকে আর পুরনো কারাগারে নেওয়া হবে না, তাকে স্থানান্তর করা হবে কেরানীগঞ্জে তিন বছর আগে চালু হওয়া নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বিএনপি নেতারা এর বিরোধিতায় বলে আসছেন, কারাগারে রেখে ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে ‘মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার’।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিসেও ভুগছেন।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকার সবসময় সচেষ্ট থেকেছে। দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, সেটি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে।
“বেগম খালেদা জিয়া যখন পুরান ঢাকার কারাগারে ছিলেন, তখন তার জন্য একজন সার্বক্ষণিক নার্স ছিল। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ছিল, একজন ডাক্তার প্রতিদিন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেন। অন্য কোনো বন্দির ক্ষেত্রে এটি হয়নি। এছাড়া তার পছন্দের একজন গৃহপরিচারিকা তার সাথে আছেন। যেটি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে অন্য কারও ক্ষেত্রে হয়েছে কিনা- আমার জানা নেই।”
খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিসের সমস্যার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও সময়ে সময়ে তার সাথে দেখা করে তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। তারপর তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার যে অসুবিধাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো বহু বছরের পুরনো সমস্যা মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তার হাঁটুর সমস্যা, নি (হাঁটু) ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১৫ বছরের বেশি আগে। এই সমস্যাগুলো নিয়েই তিনি দুবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির মত একটি বড় দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
“এই সমস্যাগুলো মাঝে মাঝে বাড়ে এবং মাঝে মাঝে কমে। সুতরাং এগুলো নতুন কোনো সমস্যা নয়।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি নেতারা যেভাবে কথা বলছেন, এগুলো যদি বেগম খালেদা জিয়া জানতে পারেন, তার জীবন সংকটাপন্ন… আমি জানি না, তিনি জানতে পারছেন কিনা… আমার মনে হয় তখন তো বেগম খালেদা জিয়াই বিএনপি নেতাদের উপর উষ্মা প্রকাশ করবেন- যে আমাকে তোমরা এভাবে কথার মাধ্যমে মেরে ফেলছ কেন!”
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নেতাদের ‘অপরাজনীতি’ না করার জন্য আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী হাছান।
সম্প্রচার আইনের অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সম্প্রচার আইনটি একটি সংবেদনশীল আইন। সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে নীতিমালা করা হয়েছে। কিন্তু আইন করতে আমাদের যত্নবান হতে হচ্ছে। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে, সেখান থেকে খুব সহসা পাব বলে আশা করছি। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এটি পার্লামেন্টে নিয়ে যাওয়া যায়।”
বাংলাদেশে ১০ বছর আগে হাতে গোণা কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা থাকলেও এখন সাড়ে তিন হাজারের বেশি অনলাইন পত্রিকা আছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সেগুলোকে আমরা সহসাই নিবন্ধনের আওতায় আনব। এখন যে কেউ একটি অনলাইন পত্রিকা খুলে বসছে, কোনো নিবন্ধন নিতে হচ্ছে না। এভাবে তো হওয়া উচিত নয়।”
সম্প্রচার আইন পাস হলে এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।