তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই, তারা তাদের রাজনীতিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা থেকে বের করে এনে পেঁয়াজের মধ্যে নিয়ে এসেছেন।’
রোববার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য থাকবে না, কারণ বিদেশ থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আসছে, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে; সুতরাং খুব সহসা এই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী ঐক্যজোটের উদ্যোগে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
সমসাময়িক রাজনীতি প্রসঙ্গে সভার প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপিকে বলবো, আপনারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যে অপরাজনীতি সবসময় করে আসছেন, সেখান থেকে যে পেঁয়াজের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন, এটি ভালো। আমি অনুরোধ জানাবো, আপনারা অবশ্যই সরকারের সমালোচনা করুন। সরকার কোথায় ব্যর্থ হচ্ছে, সেটি তুলে ধরুন। কিন্তু সরকার যে আজকে নানাক্ষেত্রে প্রচণ্ডভাবে সফল, এটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বলছে, বিশ্বব্যাংক বলছে, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলছে, সেটিই আপনারা দয়া করে বলবেন, তাহলেই দায়িত্বশীল বিরোধী দলের কাজ হয়।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল (শনিবার) বলেছেন, তারা সোমবার সারাদেশে পেঁয়াজ নিয়ে বিক্ষোভ করবেন। ফখরুল সাহেবকে ধন্যবাদ যে, তারা তাদের রাজনীতিকে বেগম জিয়ার অসুস্থতা থেকে বের করে এনে পেঁয়াজের মধ্যে নিয়ে এসেছেন।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের ব্যবস্থার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘কারা এই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত, সেটা বের করার জন্য গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছে। যারা এই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি করছে, যারা দায়ী হবে, দায়ী হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’
‘মানুষকে জিম্মি করে এইভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই ব্যবসার নীতি হতে পারে না। সরকার টিসিবির মাধ্যমে ঢাকা শহরে এবং বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। খুব সহসাই দাম কমে যাবে, স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে,’ বলেন তিনি।
মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী কখনও ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতিকে একটি ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি যদি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করতেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হতে পারতেন।
‘তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছে। পরের বছর ১৯৫০ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সভাপতি করে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। অর্থাৎ এই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বেই।’
ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপির অনেকে বড় বড় নেতা যারা কয়েক দফা মন্ত্রী ছিলেন, আজকে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান, তাদের অনেকেই মাওলানা ভাসানীর দল করতেন। অর্থাৎ তারা ক্ষমতার জন্য জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করতে দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। অনেকে জাতীয় পার্টিতেও যোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা ক্ষমতার জন্য দল ত্যাগ করেছেন।’
‘আর যারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে, তারা যখন ক্ষমতা থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকে তখন তাদের প্রচণ্ড কষ্ট হয়। কারণ তারা ক্ষমতার জন্যই তো রাজনীতি করে। সে কারণে আজকে যে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, অগ্রগতি হচ্ছে, সেটি বিএনপির জন্য গাত্রদাহ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও অন্যদল করতেন। রিজভী সাহেরও ছাত্রজীবনে অন্য দল করতেন। মওদুদ আহমদ সব দলই করেছেন। বিএনপিতে বড় বড় নেতা বেশির ভাগই হচ্ছে দলছুট নেতা। সেই দলছুট নেতাদের আমরা দেখতে পাচ্ছি, গত কয়েকদিন ধরে নানা ইস্যুতে কথা বলছে।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এম এ করিম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।