যে হাটের ইজারা মূল্য ছিল অর্ধকোটি টাকার মতো, সে হাট গত দুই বছরেও ইজারাই হয়নি। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে আয়ের ক্ষুদ্র অংশ রাজস্ব হিসাবে সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বড় অংশই চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পেটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমি কর্মকর্তার (নায়েব) খাস কালেকশন করার কথা থাকলেও হাটে ‘খাস’ কালেকশন করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা খাস কালেকশন করছেন।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাস কালেকশনের সময় ভূমি অফিসের কেউ থাকেন না। আর কত টাকা জমা হয় তাও কেউ জানতে পারেন না। এছাড়া রসিদ ছাড়াই দ্বিগুণ টাকা কালেকশন করা হচ্ছে। আর খাস কালেকশন করা ব্যক্তিদের পরিচয়পত্রও নেই।
জানা গেছে, উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক বাসেদ হাওলাদার ও সদস্য সচিব মালেক মো. ইসমাইলের নেতৃত্বে বিএনপি কর্মী কালাম বলি, মো. কাশেম, যুবদল আহ্বায়ক মো. মোর্শেদ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. মিস্টার, মো. মামুন ও কৃষকদল নেতা মো. জয়নালসহ বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী পান বাজার, পণ্য পরিবহণ, কাঁচাবাজার ও গরুর হাট থেকে খাস কালেকশন করছেন। বিশাল এ বাজার থেকে আয়ের কিছু অংশ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে দিয়ে বাকি অংশ ওইসব নেতাকর্মীর মাঝে ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে যায়। এ চিত্র রায়পুরের উত্তর চরআবাবিল ইউপির ঐতীহ্যবাহী হায়দরগঞ্জ বাজারের।
রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, হায়দরগঞ্জ বাজারসহ অন্য ২৩টি বাজারের সর্বশেষ বাংলা ১৪২৯ সনে (২০২২ ইং) ইজারা হয়। ৩৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮ টাকা ইজারা মূল্যের হায়দরগঞ্জ বাজারটি ছিল উপজেলার সর্বোচ্চ ইজারার। কিন্তু ২০২২ ও ২৩ সালের মতো চলতি বছরও বৃহৎ এ বাজারটির ইজারা হয়নি। ১৩ এপ্রিল (১৪৩০ সনের ৩০ চৈত্র) বাজারগুলোর দরপত্র গ্রহণের শেষ তারিখ ছিল। ইজারাবিহীন বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র খাস কালেকশন করা হচ্ছিল। যে বাজারের ইজারা মূল্য ছিল অর্ধকোটি টাকা, সে বাজার ইজারা না হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছেন প্রতিবেদক। কোনো হাট ইজারা না হলে সরকারিভাবে ‘খাস’ কালেকশন করার জন্য খাস আদায় কমিটি করা হয়। সে কমিটির মাধ্যমেই খাস কালেকশন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয়দের দিয়ে খাস কালেকশন করে থাকেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র বলছে, খাস আদায় হওয়া অর্ধকোটি টাকার বাজারটিতে সরকারের রাজস্ব বছরে গড়ে ১৫ লাখ টাকাও হয় না। প্রতি রবি ও বুধবার বাংলাবাজার গো-হাট, পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পানহাটা ও পরিষদের সামনে পশুপাখির হাট বসে। মেঘনা নদী সংলগ্ন রায়পুরের উত্তর চরআবাবিল ইউপি ও চাঁদপুরের চরভৈরবি ও হাইমচর ইউপির সীমান্তবর্তী হায়দরগঞ্জের এ বাজারটিতে গরু, ছাগল ও পানসহ নানা পণ্য বিক্রি হয়। প্রতি রোববার হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ভোরবেলায় প্রায় ৫০০ ছোট-বড় ব্যবসায়ীর পান হাট বসে।
উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মালেক মো. ইসমাইল বলেন, ৫ আগস্টের পর ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাওলাদার আমাদের বাজার নিয়ে দিয়েছেন। কালেকশনকৃত টাকা তহশিলদারের মাধ্যমে ইউএনওর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা বিএনপি সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ইউএনওর অধীনে গত তিন বছর বাজারের খাস কালেকশন করত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এবার আমরা একইভাবে খাস কালেকশন করে ইউএনওকে সহয়োগিতা দিচ্ছি।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ইকবাল আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ইউএনও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে বাজারের খাস কালেকশন করেন। রসিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করা ও যারা কালেকশন করছেন তাদের পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য বললেও তারা তা মানছেন না। তারা ইউএনওর কাছে টাকা নিয়ে যান। ইউএনও-ই সবকিছু বলতে পারবেন।
ইউএনও ইমরান খান বলেন, ‘হায়দরগঞ্জ বাজারটিতে গত তিন বছর ধরে খাস কালেকশন হয়। সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। এসব বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেননি। তবে বাজারটি যেন ইজারা হয় এবার সব পক্ষকে নিয়ে বসে সে ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। খাস কালেকশনে যা রাজস্ব আদায় হয়, তার পুরোটাই সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে।’