খুলনা মহানগরীর বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলবি’র এক ছাত্রীকে (২১) বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে খুলনার আয়কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়ের ছেলে শিঞ্জন রায় (২৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রী বর্তমানে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শিঞ্জন রায় ও ভুক্তভোগী মেয়ে একই ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করতেন। দুই বছর আগে শিঞ্জনের সাথে ওই মেয়ের পরিচয় হয়। এক বছর আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিয়ে করার কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে শিঞ্জন। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এমন অবস্থার মধ্যে গত বুধবার শিঞ্জন রায় পারিবারিকভাবে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে। এ খবর জানতে পেরে মেয়েটি গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডে শিঞ্জনের বাড়ির সামনে যায়। মেয়েটি শিঞ্জনকে বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে সেখান থেকে জোর করে ইজিবাইকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন বিষয়টি নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দেয়।
পরে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ জনকে থানায় নিয়ে যায়। মেয়েটি পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়। এরপর পুলিশ শিঞ্জনকে আটক করে হাজতে রাখে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শুক্রবার সকালে মেয়েটিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।
শুক্রবার সকালে ওসিসির সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিঞ্জনের বাবা আয়কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায় ও তার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদেরকে সোনাডাঙ্গা থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। শুক্রবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে শিঞ্জনের বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এহসান শাহ জানান, ভুক্তভোগী মেয়েটি বাদি হয়ে ‘জোরপূর্বক ধর্ষণ করার অভিযোগে’ শুক্রবার সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। বেলা তিনটার দিকে শিঞ্জনকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) কুমকুম নাজমুন নাহার জানান, এস আই মো. তৌহিদুর রহমানকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।
শিশু ধর্ষিত:
এদিকে নগরীর লবণচরা থানার মুজাহিদপাড়া এলাকায় ৭ বছরের একটি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ধর্ষক। শিশুটির শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, সকালে শিশুটি অন্য শিশুদের সাথে খেলতে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় এক যুবক ফুসলিয়ে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির সিঁড়ির নিচে নিয়ে ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটি পরিবারের সদস্যদের ঘটনাটি জানায়। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটি তার পরিবারকে জানিয়েছে, সে ধর্ষককে চেনে না, তবে দেখলে চিনবে।
শিশুটির মা বলেন, আমাদের বাসার পাশেই আমার খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সকালে মেয়েকে ১৫-২০ মিনিট পাওয়া না যাওয়ায় খোঁজখুঁজি শুরু হয়। আমাদের বাড়ির এক বাড়ি পরে দোতলা বাড়ির সিড়ির নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে বলে জানান শিশুটির মা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এহসান শাহ জানান, শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ধর্ষককে গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান চালাচ্ছে।