ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্য এখন জনগণের কাছে ‘হাস্যরসে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেছেন, “অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি আমার বিনা অনুমতিতে (সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে) মামলা করেছে, আমি আশা করব তারা এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করবে।”
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন উৎসব’ উপলক্ষে মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তাপস।
ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা শনিবার ঢাকায় কদম ফোয়ারার সামনে মানববন্ধন করলে তাতে যোগ দিয়ে মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাপস সোমবার বলেন, খোকনের ‘মানহানিকর’ বক্তব্যের বিষয়ে তিনি ‘আইনি ব্যবস্থা’ নেবেন। এদিকে সোমবারই দুই ব্যক্তি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে খোকনের বিরুদ্ধে দুটি ‘মানহানি’ মামলার আবেদন করেন।
তাপস নিজে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে কোনো ‘আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ’ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “আমার মনে হয় না এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যের প্রয়োজন আছে। জনগণ আসলে বিষয়টা খুব হাস্যকর হিসেবে নিয়েছে। এটা আসলে হাস্যকর হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলা সমীচীন নয়, কারণ আমি একটি দায়িত্বশীল পদে রয়েছি।
“অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করতে পারে, দায়িত্বশীল পদে যিনি থাকেন তাকে নিয়ে নানা মন্তব্য আসতে পারে। সব মন্তব্য তো আর গুরুত্ব বহন করে না। সেটার প্রেক্ষিতে মন্তব্য করাও সমীচীন না।”
তাহলে কি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তাপস বলেন, সোমবার যে দুটো মামলার আবেদন হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন।
“আমি তো বলেছি, যে মামলা হয়েছে তা আমি করিনি। যারা মামলা করেছেন তাদের অনুরোধ করব এই মামলা প্রত্যাহার করেন। মানহানি যদি আমার হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আমি পর্যালোচনা করব, ভবিষ্যতে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“
এ বিষয়ে এর পর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বক্তব্য দিতে চান না জানিয়ে মেয়র বলেন, “এতে যদি আমাকে গালাগালি করা হয়, তারপরও আমি জবাব দেব না।”
সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেট থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা চলবে বলে জানান মেয়র তাপস।
“দুটো মার্কেটে আমরা সম্পন্ন করেছি। ভবিষ্যতে কৌশল অবলম্বন করে অন্যান্য মার্কেটেও অভিযান করব। আমরা শুধু মার্কেট না, জলবদ্ধতা নিরসনেও কাজ করছি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা হাস্যরসের পাত্র হতে চাই না। আমার হাতে সময় নেই।”
গত মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশনের ‘রেকর্ড পরিমাণ’ রাজস্ব আয় হয়েছে দাবি করে তাপস বলেন, “গত ছয় মাসে যে বাজেট দিয়েছিলাম আমরা, রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছি। ৩৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই করোনা মহামারীর মাঝে।
“আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা ব্যস্ত রয়েছি। আমাদের অনেক কাজ রয়েছে। আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ দেবেন। ভুল হলে সেগুলো আমাদের দেখিয়ে দেবেন। কিন্তু এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত বিষয় নিয়ে সময়ক্ষেপণ করার সময় নেই।”
সিটি করপোরেশনের টাকা সরানোর যে অভিযোগ সাবেক মেয়র খোকন করেছেন, সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তাপস বলেন, “মধুমতি ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর নিয়ে যে তথ্য দিয়েছেনে- এটা বিভ্রান্তিকর তথ্য। গত সাত বছর ধরে অত্যান্ত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত একটি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক হিসাবে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করার আগেও মধুমতি ব্যাংকের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ব্যবসায়িক বা সেবামূলক লেনদেন ছিল। আমানত হিসেবে দক্ষিণ সিটির অর্থ তখন মধুমতি ব্যাংকে ছিল, এখনো আছে।
“সুতরাং আমি মধুমতি ব্যাংকে শুধুমাত্র একজন পরিচালক হিসেবে এখানে কোনো অযাচিত বা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কিছু করা হয়েছে এমনটা না। সেখানে এমন কোনো নথি দেখাতে পারবে না যে আইন বহির্ভূতভাবে অনৈতিকভাবে কোনো কিছু করা হয়েছে। শুধু উনাকে না, সারা বাংলাদেশের সবাইকে আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম।”
তাপস বলেন, “আমাদের অভিযানটা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। আমাদের অভিযান তার বিরুদ্ধে না। সেই অবৈধ দখলদারদের সাথে তার কী লেনদেন হয়েছে সেটা তো পূর্বের বিষয়। যখন তারা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আদালতের আশ্রয় নিতে পারেনি তখনই তারা সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেছে তাদের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের থেকে অর্থ নেওয়া হয়েছিল, অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়েছিল, বলেছিল তাদের বৈধ করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে বৈধ করা হয়নি।“