বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকার একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা মরহুম সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দেয়নি। তাকে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকদের মতো ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে দেশে আনা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, এই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করে স্বাধীনতার স্পিরিটকে ক্রমশ: ফিকে করছে; কিন্তু মরহুম সাদেক হোসেন খোকার জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে সরকার চক্রান্ত করলেও জনগণের হৃদয়স্পর্শী আবেগকে স্তব্ধ করে রাখা যায় না।
তিনি বলেন, তবে দেশবাসী বেদনার্ত যে, এদেশের বীর সন্তান সাদেক হোসেন খোকা জীবনবাজি রেখে যে দেশটা স্বাধীন করতে বীরোচিত ভূমিকা রেখেছিলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে মারা যাওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরলেন ‘রিফিউজি’ কিংবা ‘রাষ্ট্রীবিহীন নাগরিকে’র মতো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে যারা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আছেন, তারা সাদেক হোসেন খোকাকে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ দিতে অস্বীকার করেছে।
রিজভী জানান, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৬ নভেম্বর বুধবার লন্ডনে দলীয় এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা হচ্ছে, যেকোনো অবস্থায় বাংলাদেশের পক্ষে থাকা, বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে থাকা। যারা এর বিরুদ্ধে তারা বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী অপশক্তি। তারা কখনোই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি নয়। বর্তমান জনম্যান্ডেটহীন সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দেশে-বিদেশে নানারকম চুক্তি করছে, কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারেক রহমান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জানান, তারেক রহমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিএনপির নীতি কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয় বরং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের যেসব নীতি ও কৌশল বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী বিএনপি সেইসব নীতি ও কৌশলের বিরুদ্ধে। ভারত কিংবা যে দেশই হোক, বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো চুক্তি কিংবা কর্মকাণ্ড হলে বিএনপি অতীতের মতো এখনো কিংবা ভবিষ্যতেও অবশ্যই বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াবে। দেশের জনগণের স্বার্থের পক্ষে দাঁড়াবে। এটাই বিএনপির নীতি। বিনাভোটের সরকার গত একদশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তার প্রতিটি চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবিও জানিয়েছেন তারেক রহমান। এসব চুক্তির মধ্যে যেসব চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী সেসব চুক্তি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
রিজভী বলেন, ভারতের সঙ্গে বর্তমান মিডনাইট সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তির কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, টাওয়ার বসিয়ে সমুদ্র উপকূলে ভারতের নজরদারির সুযোগ দেয়ার চুক্তিতে বাংলাদেশের কী লাভ সেটা জনগণকে জানতে দিতে হবে। বিদেশ থেকে এলপিজি এনে দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করে এটি ভারতে রফতানি করলে বাংলাদেশের কী লাভ সেটি জনগণের সামনে স্পষ্ট করতে হবে। যার সঙ্গেই যে চুক্তিই হোক, আগে নিশ্চিত করতে হবে বিনিময়ে কী পেলো বাংলাদেশ।
রিজভী বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে নিয়ে এখনো চলছে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র। দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহবান, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই রাষ্ট্রটিকে আমরা ব্যর্থ করে দিতে পারিনা। এই দেশটা কোনো ব্যক্তির নয়, কোনো দলের নয়, এই দেশটা আমার-আপনার-আমাদের সকলের। এই দেশটাকে রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে এই নভেম্বরের চেতনায় তাই আবারো আমাদের জেগে উঠতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ আনবে, তাদের সে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, প্রমাণ করতে না পারলে মিথ্যা অভিযোগকারীদেরকে শাস্তি পেতে হবে।’ ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্বয়ং ছাত্রলীগ। ভিসি কিভাবে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বিতরণ করেছিলেন তা গণমাধ্যমে বিশদভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ নেতারা ভিসি এবং ভিসির পরিবারের বিরুদ্ধে টাকা লেনদেনের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেটিও গণমাধ্যমে এসেছে।