দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনৈক্য গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই অনৈক্য দুর করা সম্ভব না হলে অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতেও সমস্যা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন।
গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান দল থেকে বহিস্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এই সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন পরিচালনার জন্য দলের কেন্দ্র থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম যথেষ্ঠ ছিলো বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন। কিন্তু তারপরও দলের প্রার্থীর পরাজয় নতুন করে দলটির জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই পরাজয়ের জন্য নিজ দলের একটা বড় অংশের ভোট না পাওয়াকে তারা দায়ী করছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণি পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং। এতে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দলের একটি বিরাট সংখ্যক ভোটার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কার হলেও দলের কর্মীদের মধ্যে তার একটি প্রভাব রয়েছে। তার কারণে আওয়ামী লীগের অনেক ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী না থাকায় বিএনপি এবং ওই ঘরানার ভোটারও তাকে ভোট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাতে জিততে না পারে সে জন্য বিএনপির ভোট এক জায়গায় পড়েছে। এটিই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের বড় কারণ বলে আওয়ামী লীগের ওই নেতারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা টিমের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বড় কারণ দলের বিরাট অংশ আমাদের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। অন্য কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। আর একটি কারণ বিএনপির পুরো ভোটই বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছেন। আর কোনো কারণ আমি দেখি না।
এদিকে গাজীপুরের এ পরাজয়কে দলের জন্য সতর্ক সংকেত বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। গাজীপুরের পর রয়েছে আরও চারটি সিটি করপোরেশন বরিশাল, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীর নির্বাচন। এর পর সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ প্রেক্ষাপটে পরাজয়ের বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারেই বিবেচনা করছেন তারা। কারণ সামনে যে সিটিগুলোতে নির্বাচন হবে সেগুলোতেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কম বেশি মতবিরোধ আছে। এগুলো যদি দূর করে ঐক্যবব্ধভাবে নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো না যায় তবে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে দলের নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।
গাজীপুর নির্বাচনের পরাজয় ও অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, গাজীপুরের মতো অন্য দুই একটি সিটিতেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। মত বিরোধী ও ভেতরে ভেতরে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা আছে। বিরোধিতা বন্ধ করে এদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাতে না পারলে কোথাও কোথাও সমস্যা হতে পারে।
এদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় হলেও দলের নেতারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। এ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে বিএনপির নেতারা যে অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা তুলে ধরছেন।
গত ২৬ মে এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হলে দেশের মানুষ যতটা খুশি হতো তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে নিরপেক্ষ, ফ্রি, ফেয়ার হওয়ার জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি। শেখ হাসিনা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, সারাদেশে বিদেশে প্রসংশনীয় হচ্ছে। বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলছে গাজীপুরে সেটি মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন একইভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে।