করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বাংলাদেশ কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ এ সময় সবাই ঘরে থাকাটাই নিরাপদ। বিষয়টা সবাই জানে, কিন্তু অনেকে মেনে চলছেন না।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) ছিল মহান স্বাধীনতা দিবস। হানাদার পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে এদিনই ঘর ছাড়েন বাংলার অগণিত দামাল মুক্তিযোদ্ধা। এরপর প্রায় টানা ৯ মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। সেদিন ঘর থেকে বের হওয়ার শপথ নিলেও এবারের ২৬ মার্চে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানান সাবেক টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে করোনা নিয়ে আগে থেকেই সামাজিক সচেতনতামূলক পোস্ট দিচ্ছেন মাশরাফি। এবার সবাইকে ঘরে থাকার শপথ নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘২৬শে মার্চ, ১৯৭১: শপথ ছিল ঘর থেকে বের হবার। ২৬শে মার্চ, ২০২০: এবারের শপথ ঘরে থাকার। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করুন। খেলার স্বাধীনতা যদি আবার ফিরে পেতে চাই, এখন তাহলে উত্তম কিন্তু ঘরে থাকাটাই…।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিজ জেলা নড়াইলে গিয়েছিলেন মাশরাফি। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরেই সপ্তাহখানেক ধরে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী অবস্থায় আছেন তিনি। এসময় সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানানোর পাশাপাশি দুস্থদের সহায়তাও এগিয়ে এসেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। যদিও পরিস্থিতির কারণে ঘরবন্দী থাকায় ঠিক ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছেন না।
মাশরাফি নড়াইল-২ আসনের নির্বাচিত সাংসদ। নিজ এলাকার মানুষের জন্য ঢাকায় বসেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে নড়াইলের কর্মহীন ১২০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজস্ব তহবিল থেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ২২০ সুরক্ষার পোশাক পিপিই জোগাড় করেছেন। এছাড়া প্রাথমিকভাবে ৩০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করার জন্য ৮ টন চালও কেনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
খেলোয়াড় মাশরাফিও কম যান না। ক্রিকেটারদের গঠিত তহবিলে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। নিজেদের বেতনের অর্ধেকের সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে ৩০ লাখ টাকার তহবিল গঠন করেছেন তামিম-মুশফিকরা। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন পেসার রুবেল হোসেন। একই উদ্যোগ নিয়েছেন লিটন দাসও।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আর মারা গেছেন ৫ জন। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ২৬২ আর মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার ৯০।