প্রকৃতির পরিবর্তনের খেয়াল-খুশিতে বর্তমানে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড দাবদাহ। এতে অতিষ্ঠ জনজীবন এবং জীববৈচিত্র্য। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি বাংলার পুকুর, মাঠ-ঘাট, নদ-নদী, খাল-বিল সব শুকিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর এ সময় গরমের এমন দাবদাহ থেকে বাঁচতে মানুষ এসিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। যদিও এসি দ্রুত সময়ে ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। তবে এটি সব সময় সুখকর হয় না। গরমের পাশাপাশি লোডশেডিং ও অতিষ্ঠ করে তুলছে জনজীবন। লোডশেডিংয়ের প্রভাবে এসিও এখন মূল্যহীন বস্তু হয়ে যাচ্ছে। আবার এসি ক্রয়ে অনেকের মূল্য বহন করার সামর্থ্যও থাকে না। আবার এসির জন্য বিদ্যুতের লোডও বেশি প্রয়োজন হয়। তাই সময় এসেছে এ গরমে প্রকৃতি এবং জনজীবনকে রক্ষা করতে কৌশলগত কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তাপ কমানোর পরিবেশ সৃষ্টি করা।
মোটা কাপড়ের সুতির পর্দা ব্যবহার
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের বাহারি রঙের পর্দা পাওয়া যাচ্ছে। তবে গরমের তাপ কমাতে কালো, বেগুনি, নীল রঙের গাঢ় পর্দা ব্যবহার সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ এমন রংগুলোর তাপ শোষণ করার ক্ষমতা বেশি কিন্তু অন্যদিকে তাপ বিকিরণ করার ক্ষমতা কম। তাই এ রঙের পর্দা অধিক উপযোগী।
দুই স্তর গ্লাসবিশিষ্ট জানালা ব্যবহার
সাধারণত কাচের ২টি স্তরবিশিষ্ট প্যানেলকে সবাই ডাবল প্লাসযুক্ত জানালা বলে। এসব জানালার বিশেষত হিসাবে কাচের মধ্যকার জায়গা বিশেষ গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করে দেওয়া হয়। তবে গ্যাস যেন না বের হতে পারে সেজন্য সিল করে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতির জানালায় ২টি স্তর থাকে এবং মাঝখানে গ্যাস থাকে বলেই রোদের তাপ বাসায় পৌঁছাতে পারে না। প্রচণ্ড গরমে এ কাচের গ্লাস স্বস্তি দিতে পারে তাপ থেকে মুক্ত রেখে। আবার শীতকালেও সুবিধা রয়েছে, শীতকালে প্রকৃতির প্রচণ্ড হিমেল বাতাসকেও বাসায় প্রবেশ করতে দেয় না। তবে জানালাগুলোর পাল্লা কাচের হলে গরম বেশি অনুভূত হতে পারে। কারণ কাচের মধ্য দিয়ে সূর্যের তাপ দ্রুত শোষণ হয় এবং ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে হিট প্রটেক্টিং উইন্ডো ফিল্ম লাগানো যেতে পারে।
রোদের দাবদাহ অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া
বাসার মোট উষ্ণতার প্রায় ২৫ শতাংশ তাপ জানালা দিয়ে প্রবেশ করে। দিনের অংশে জানালা বন্ধ রাখলে অনেকাংশে তাপ বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
রাতে বাসায় বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা
রাতে ঘুমানোর আগে বা পরে জানালা খুলে রাখলে বাসার গরম বাতাসগুলো বাইরে গিয়ে বাইরের ঠান্ডা বাতাস বাসায় প্রবেশের সুযোগ পাবে। এতে করে বাসা ঠান্ডা থাকবে বেশি।
তুষার পদ্ধতি
ঘর ঠান্ডা রাখতে সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল একটি পদ্ধতি। এটি করতে বাসায় ফ্যানের নিচে একটি পাত্রে কয়েকটি বরফের টুকরা রাখলে এগুলো একটা সময় গলতে শুরু করে। আর এভাবে ফ্যানের বাতাস বরফ ছুঁয়ে যাওয়াতে বাসায় ঠান্ডা অনুভূতি শুরু হবে। যেটা এসি থেকে ভালো কাজ দেয়।
প্রকৃতিতে সবুজ পাতা বৃদ্ধি করা
তাপ কমাতে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত পদ্ধতি হলো গাছ রোপণ। গাছ গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় পরিবেশে পরিস্থিতি অনুসারে রোপণ করা যায়। তবে শহুরে জায়গার সীমাবদ্ধতার জন্য অ্যালোভেরা, অ্যারিকা পাম, গোল্ডেন পোথোস বা সাদা-সবুজ মিশেলের মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট বা ফণিমনসা, ফার্ন ইত্যাদি গাছ রোপণ সহজসাধ্য হয়। এছাড়া আইভি, দ্রুত বর্ধনশীল লতা এবং অলংকারিক গৃহস্থালির উদ্ভিদ দেওয়াল বা জানালায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব গাছ শহুরে বাসার জানালায় বা বারান্দায় রোপণ করা যায়। এতে জানালার পরিবেশ ও বাসার অবকাঠামোগত নানন্দিকতা বৃদ্ধি পায়।
সিলিং কিংবা টেবিল ফ্যানের ঘূর্ণন
সিলিং কিংবা টেবিল ফ্যান গ্রীষ্মকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে যেন বেঁচে থাকার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। ফ্যান অধিক হিমেল বাতাস অনুভব করতে বাসায় ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে পাখার ডানার ঘূর্ণনমান করে বসাতে হবে। আর শীতকালে রাখতে হবে ঘড়ির কাটার সমমুখী করে পাখাগুলো। গরমে বিপরীতে থাকার কারণে গরম বাতাস দ্রুত অপসারণ করতে সক্ষম হয়।
দেওয়ালে নান্দনিক রঙের ডিজাইন
গরমের তাপ থেকে বাঁচতে বাসার দেওয়াল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে সৌন্দর্যতার জন্য সবাই দেওয়ালে রং লাগিয়ে থাকে। কিন্তু একটু পরিকল্পনা করে যদি হালকা করে রং লাগিয়ে থাকে তাহলে দেওয়ালে রোদের তাপ কম শোষণ করে থাকবে। গাঢ় রং সব সময় অধিক তাপ শোষণ করে। হালকা রং তাপ কম শোষণ করে বিধায় তাপ অধিক সময় আটকে রাখতেও পারে না। এতে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় বাসা।