ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য অন্যান্য জাহাজসহ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শনিবার বিকালে কোস্টগার্ড মোংলা স্টেশনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে-এমন সম্ভাবনায় খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনাসহ উপকূলীয় জনপদে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতার জন্য খুলনার নৌঘাঁটি তিতুমীরে পাঁচটি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, মোংলা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষর পক্ষ থেকে এমটি সুন্দরবন, এমটি শিবসা ও এমটি অগ্নিপ্রহরী নামে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবলোয় ‘সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষর কেন্দ্রীয় একটি সহ দুইটি সাব কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’
এছাড়া কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে-কামরুজ্জামান, মুনসুর আলী, স্বাধীন বাংলা, সোনার বাংলা ও অপারেজয় বাংলা নামে পাঁচটি উদ্ধারকারী জাহাজ বলে জানান তিনি।
১৯৬০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৬টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ৯টি আঘাত হেনেছে নভেম্বর মাসে। সাম্প্রতিক সব চেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে।
বেড়িবাঁধ নিয়ে জনমনে শঙ্কা
উপকূলীয় তিন জেলার ‘প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ’ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, আবহাওয়ার সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কিত আমরা।
“ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বেড়েছে বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের গতি। জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন আতঙ্কে কয়রার মানুষ। অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।”
তবে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ‘প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের শঙ্কার কথা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর পর সব বাঁধই মেরামত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণস্থান জরুরি মেরামত করে মোটামুটি একটি পর্যায় রয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি কতদূর পর্যন্ত বাড়ছে তা রেকর্ড করা হচ্ছে বলে জানান।
“আমরা সবাই মাঠ পর্যায়ে রয়েছি।”
ঝড়ের মুখে মোংলা সমুদ্রবন্দর
সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় মহাবিপদ সংকেত জারির পর অনেক স্থানে পতাকা উড়তে দেখা গেছে।
এলাকাবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মোংলা ইউএনও রাহাত মান্নান।
এদিকে মোংলা বন্দরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে ইতোমধ্যে পশুর চ্যানেলে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে বন্দরের জাহাজ আগমন ও নির্গমন।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, “বুলবুলের প্রভাবে সাগর ও সংলগ্ন সুন্দরবনের নদ-নদী খুবই উত্তাল রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনায় জেলা প্রশাসন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় খুলনায় ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নয়টি উপজেলায় মোট ১৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
স্থানীয় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জেলার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের দুবলার চরে অনুষ্ঠিতব্য রাসমেলায় যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।