চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে: ডাকসু নেতাদের প্রধানমন্ত্রী

PM-Ducsu

ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্যাম্পাসে যাতে গোলাগুলি ও বোমাবাজির ‘পুরোনো রাজনীতি’ ফিরে না আসে সেই লক্ষ্যে সরকার ‘আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে’ জানিয়ে ছাত্রনেতাদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শনিবার গণভবনে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর এই ডাকসু নির্বাচন যাতে হানাহানি ও সন্ত্রাসমুক্ত হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ‘বিশেষ নির্দেশনা’ দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ হয়, যেন কোনো বোমাবাজি না হয় আমি সেই দিকে সতর্ক থাকতে বলেছিলাম। নির্বাচনে যে-ই অংশ নেবে, কে ভোট পেল কে ভোট পেল না সেটা বিষয় না। ছাত্র-ছাত্রীরা যাকে চাইবে সে-ই হবে। আমরা সেই দিকেই দৃষ্টি দিয়েছি।”

ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ডাকসুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জীব চন্দ্র দাস। তার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদের ভিপিরা, ডাকসুর নবনির্বাচিত এজিএস সাদ্দাম হোসেন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বক্তব্য দেন। এরপর বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয় ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূরকে।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভিপি পদে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা নূরের কাছে হেরেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন।

শেখ হাসিনা বলেন, “ছাত্রলীগ থেকে ভিপি পদে জিততে পারেনি। সে আমার কাছে এসেছে। আমি বলেছি, ঠিক আছে। জিততে যেহেতু পারনি, যেই জিতেছে সেটা যে কারণেই হোক, তুমি গিয়ে অভিনন্দন জানাবে এবং বলবে তাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।”

নবনির্বাচিত নেতাদের ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে জিতবে তারও দায়িত্ব খুব বেশি। তার দায়িত্ব হল, কে ভোট দিল, না দিল- সেটা দেখার বিষয় নয়।”

বক্তব্যে ছাত্র সংসদে নিজের নেতৃত্ব দেওয়ার স্মৃতিচারণও করেন শেখ হাসিনা। পাকিস্তান আমলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভোটে জিতে এসে তাকে শিক্ষার্থীদের অধিকারে কাজ করতে হয়েছিল বলে নতুনদের শোনান তিনি।

আগে এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলত, তার বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিনিয়তই বোমাবাজি চলতে থাকত। আমার লক্ষ ছিল অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন থাকবে? খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ঘোষণা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। তার জবাব আমি দিয়েছিলাম ছাত্রলীগের হাতে খাতা ও কলম তুলে দিয়ে।”

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ‘অশুভ প্রতিযোগিতা’ হয়নি।

“তবে আমাকে ব্যথিত করে যখন কোটা আন্দোলনে ভিসির বাড়িতে হামলা, লুটপাট, আগুন দেওয়া, গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু কখনোই গ্রহণযোগ্য না।

“সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়ে আসছে। সেখানে খুব বেশি কিছু হলে বাড়ির সামনে কয়েকটা ফুলের টব ভাঙা হত। তবে ভিসির বাড়ির ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়ার ঘটনা কখনোই ঘটেনি। দেখা গেছে এসব কিছু করার জন্য আন্দোলনের ভেতরে অন্য লোক জুটে যায়।”

কোটা আন্দোলনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্দোলনটা যখন ছাত্ররা করে যাচ্ছিল তার সঙ্গে যখন ভিসির বাড়িতে আক্রমণ হল, মেয়েরা যখন হল থেকে বের হয়ে চলে এলো মধ্যরাতে, আমি তো সারারাত ঘুমাতে পারিনি।

“জঙ্গিবাদ যেটা আছে তারাও তো এর মাঝে ঢুকে পড়তে পারে! স্বাভাবিকভাবেই একটা উদ্বেগ। সাহস থাকা ভালো, কিন্তু পরিবেশটা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।”

কোটার পরে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সূত্র ধরে কারা এদের মধ্যে ঢুকতে পারে, কী ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তার দায় কে নেবে? এটাকে আমরা কখনও মেনে নিতে পারিনি। স্বাভাবিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এই ধরনের সুযোগসন্ধানী সব সময় আছে, এটা থাকেও প্রতিটি আন্দোলনের মাঝে।

“সেজন্য এ বিষয়গুলোতে যারা নেতৃত্ব দেবে তাদেরকে সচেতন হতে হবে,” বলেন তিনি।

ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্ব পরবর্তী নেতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ভবিষ্যত নেতৃত্ব যদি ছাত্রজীবন থেকে গড়ে না উঠে তাহলে সেই নেতৃত্ব একটা দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে? সেই ক্ষেত্রে আমরা স্কুল থেকে ক্যাবিনেট নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি।

“ছোটকাল থেকে গণতন্ত্র চর্চার একটা অভ্যাস যেন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে গড়ে ওঠে। একটা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে।”

নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য এ নির্বাচন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একটা বিষয়ে আমি আনন্দিত যে, সেখানে কোনো রকম সন্ত্রাস-বোমাবাজি এই নির্বাচনে প্রবেশ করেনি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশন জট নেই। কারও যদি পড়ার ইচ্ছা থাকে পড়ুন। কিন্তু সময় মতো পাস করার পরিবেশটা তৈরি করতে হবে। তারুণ্যের মেধাটা আমরা দেশের জন্য কাজে লাগাতে চাই।”

জাতির পিতার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এগোতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Pin It