সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার ইতালিতে আরও এক বাংলাদেশি সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর প্রেক্ষাপটে ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও কুয়েত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে কিছুটা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এই চার দেশ থেকে যাত্রীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন সনদ লাগবে। অন্যথায় তাদের কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না।
বুধবার করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সোব্রিনা ফ্লোরা এ কথা বলেন।
ইতালিতে করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতালিতে বাংলাদেশি এক নাগরিকের করোনা আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিতে তার বাসায় কোয়ারান্টাইনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ইতালিতে বাংলাদেশের দূতাবাস নিশ্চিত করেছে, আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর নয় বলে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না থাকার সনদ ছাড়া চার দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও কুয়েতের যাত্রীদের অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সুতরাং কেউ বাংলাদেশে আসতে চাইলে আগেভাবে নিয়মমাফিক ভিসার আবেদন করতে হবে। ভিসা নেওয়ার সময় তারা যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মুক্ত- এমন সনদ দাখিল করতে হবে। যাত্রী যাতায়াতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন উচ্চঝুঁকিতে থাকায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চলাফেরায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে চীনের ভেতরে করোনাভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনা গেলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। ইতিমধ্যে ৭৩ দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্বেগের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও জাপানকে হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, এমন দেশ থেকে আপাতত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে আসা এবং বাংলাদেশ থেকে না যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার তথ্য গোপন করছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে সরকার কোনো তথ্য গোপন করছে না। রোগী বা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা জানানো হবে। সুতরাং এটি নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, সন্দেহভাজন ১০২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত নন। চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কারও করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. ফ্লোরা বলেন, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাইরে বেরিয়ে গেলেও দুই থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সেদিক থেকে সীমান্ত দিয়ে আসা পণ্যের মাধমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।
করোনা প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন স্তরের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জেলা কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রত্যেকটি কমিটিকেই সিভিল সার্জনরা থাকবেন।