চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর শেষে মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার আরও ৯৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ায় প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সরকারকে আগের চেয়ে ব্যাংকের দারস্থ কম হতে হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতি, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আয়ে কিছুটা গতি আসায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে।
২০০৭-০৮ মেয়াদে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা প্রচুর ঋণ সহায়তা দেওয়ায় সরকারকে এখন আর ব্যাংক তেমন ঋণ নিতে হচ্ছে না।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, সামনে দাতাদের ঋণ দেওয়া যেতে পারে। তখন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেড়ে গেলে বাধ্য হয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে সরকারকে।
করোনাভাইরাস মহামারীর এই কঠিন সময়ে রাজস্ব আদায় কমার আশঙ্কাসহ নানা কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরে সরকার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৬৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
অপর দিকে অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদেশি ঋণ সহায়তার তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
এ সময়ে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে এই ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে।
কোভিড-১৯ এর ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এ সব সহায়তা দিচ্ছে দাতারা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা; যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা।
আবার বেসরকারি খাতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর কারণে অনেকে এখন ঋণ পরিশোধ করছেন না।
এদিকে এই মহামারীর মধ্যেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১১ হাজার ৬৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
{আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়}
তবে এসব উপায়ে সরকারের কাছে অনেক অর্থ এলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে তেমন উন্নতি নেই। গত অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।