মাতৃভাষায় অবদান রাখার জন্য ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ চালু করবে সরকার। এখন থেকে দুই বছর পরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোট চার জনকে পুরস্কৃত করা হবে। জাতীয় ক্যাটাগরিতে দুই জনকে এবং আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে দু’জনকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই পদকের জন্য বিবেচনা করা হবে। এসব বিধান রেখে তৈরি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পদক নীতিমালা-২০১৯ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ।
সোমবার তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
সচিব জানান, ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে দুই বছর পরপর সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট পদক বিতরণ করবে। এই পুরস্কার হবে একুশে পদকের বাইরে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এই দুই ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, দেশীয়ভাবে পদকের মূল্যমান হবে চার লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে পদকের মূল্যমান পাঁচ হাজার ডলার। পদক বাছাইয়ের জন্যে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে একটি কমিটি আলাদাভাবে কাজ করবে। পরে চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে শুরুতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আলোচনার শুরুতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ব্রিজটি পুরাতন ছিল। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী পুরোনো ব্রিজগুলো পুনঃস্থাপনে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বৈঠকে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম অবহিত করেছেন, সিলেটের সঙ্গে ও ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক হবে।
বিকেএসপি আইন অনুমোদন: বৈঠকে ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) আইন, ২০১৯ ও বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন, ২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপিত সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তির খসড়া অনুমোদনে এর আগে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাবও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিকেএসপি’র ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত আইনে বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে। কমিটি বছরে দুইবার সভা করবে। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে যিনি থাকবেন তিনিই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন। সরকার মনোনীত ২০ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত পরিষদের মেয়াদ থাকবে তিন বছর। অধ্যাদেশে অন্যান্য যেসব বিষয়গুলো নতুন আইনে আগের মতই থাকবে।
৫০ শতাংশ পণ্য আনতে হবে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজে: রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী জাহাজের সুরক্ষায় নতুন আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্যের ৪০ শতাংশ পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের বিধান ছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক সরকারের আমলের আইনকে বাংলায় রূপান্তর করে নতুন করে করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুন আইনে সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্যের ৫০ শতাংশ পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পতাকাবাহী জাহাজ মানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত যে কোনো জাহাজ। কোনো জাহাজ এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ওই জাহাজ কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা করা হবে। অধ্যাদেশে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা ছিল না। প্রশাসনিক জরিমানা নিয়ে সংক্ষুব্ধ হলে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন: মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দৃষ্টিতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। এডিবি’র এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।