এবার মৌসুমে ধানের দাম কমার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। বোরো ধানের নতুন চাল বাজারে আসায় চালের দাম কেজিতে গড়ে ৫ টাকা কমেছে। মোটা চালের দাম এখন ৩০ টাকা। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, চলতি বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ধানের চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের বছরের পুরনো চালের চেয়েও কেজিতে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল মিরপুর ১ নম্বর বাজার, পীরেরবাগ বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি গুটি ও স্বর্ণা নতুন চাল ৩০ টাকা এবং পুরনো গুটি ও স্বর্ণা ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও গুটি ও স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া এখন বিআর আটাশ নতুন চাল ৩৫ টাকা এবং পুরনো চাল ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। তাছাড়া মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি মিনিকেট চালের দাম কমে ৩৮ থেকে ৫০টাকায় নেমেছে। মিরপুর ১ নম্বর মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও পীরেরবাগ বাজারের মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এবার মৌসুমে নতুন চাল আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্য বারের তুলনায় দাম অনেক কমে গেছে। এবার ধানের দাম কম থাকায় মিল মালিকরা কম দামে চাল সরবরাহ করছেন। এ কারণে বাজারে কম দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। তারা বলেন, চালের দাম কমে যাওয়ায় আগে বেশি দামে কেনা চালও এখন কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোটা চালের দাম তিন বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মোটা চালের দর ২৪ শতাংশ কমেছে। মাঝারি চালের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। সরু চালের দামও প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। টিসিবির বাজার দরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে বন্যার ফলে ধানের উৎপাদন ঘাটতি হয়। তখন মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এর পরে চাল আমদানি বাড়লেও ৪৮ টাকা কেজিতে মোটা চাল বেচাকেনা হয়। ২০১৮ সালে বোরো মৌসুমের এই সময়ে মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। পরে গত আমন মৌসুমে চালের সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কিছুটা কমে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় নেমে আসে। চলতি বোরো মৌসুমে এসে দাম কমে গেছে।
কারওয়ান বাজারের চালের আড়তের পাইকারী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে চালের সরবরাহ বেশি হচ্ছে। মৌসুমে এই সময়ে কম দামে ধান কেনাবেচা হওয়ায় মিলমালিকরা কম দামে চাল সরবরাহ শুরু করেছেন। নতুন চালের দাম কেজিতে প্রায় ৫ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে এতে ক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন; কিন্তু এবার কৃষক ধানের দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ধানের দাম কমে যাওয়ায় চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক্ক বাড়িয়েছে। আগে চাল আমাদনিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক্ক ছিল। এখন শুল্ক্ক-কর বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে। আড়তদার ব্যবসায়ীরা আমদানি শুল্ক্ক বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, চালের আমদানি শুল্ক্ক অনেক দেরিতে বাড়ানো হয়েছে। এই শুল্ক্ক মৌসুমের ধান ওঠার আগে বাড়ানো হলে কৃষকরা ধানের ভালো দাম পেত। এখন বেশিরভাগ ধান মিলমালিকরা কিনে নিয়েছেন। বর্তমানে কম শুল্ক্কে আমদানি করা পর্যাপ্ত চাল মজুদ আছে। আর মৌসুমের এই সময়ে চাল আমাদানি গত বছরেও তেমন হয়নি। ফলে শুল্ক্ক বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে তেমন পড়বে না। চালের দাম স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে করেন তারা।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, চালের শুল্ক্ক বাড়ানো যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটি আরও আগে বৃদ্ধি করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতেন। দীর্ঘ মেয়াদে এই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। এতে চাল আমদানি কমলে দেশে ধানের ভালো দাম পবে কৃষকরা। তিনি বলেন, কম দামে ধান বিক্রি হওয়ায় চালের দাম কমবে এটা স্বাভাবিক। তবে এখন যাতে কম দামে কেনা ধানে অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সে বিষয়ে তদারকি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।