সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ে চাল আমদানি বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একই সঙ্গে উৎপাদন বেশি হওয়ায় সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান কেনার ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছে কমিটি। সোমবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, আয়েন উদ্দিন এবং আতাউর রহমান খান। বৈঠকে কমিটি আরও বলেছে, এবার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে চাল কিনতে হবে। একই সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে কোনো ধরনের সুযোগ না পায়, সেজন্য কঠোর নজরদারি রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ধানের উৎপাদন এবার বেশি হয়েছে। এজন্য সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ টনের চেয়ে বেশি ধান কিনতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি করার সুপারিশ করেছে কমিটি। বৈঠকে জানানো হয়, সরকার ধান-চাল ক্রয়ের জন্য ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করলেও ক্রয় অভিযান এখনও শুরু হয়নি। সরকারিভাবে এবার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধান ও চাল ক্রয় এখনও শুরু না হওয়ায় ফড়িয়ারা খেয়ালখুশিমতো দাম নির্ধারণ করে ধান কিনছেন; কৃষকরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। সরকার প্রতি মণ বোরো ধান ১০৪০ টাকায় কিনলেও কৃষক পাচ্ছেন তার চেয়ে অনেক কম। এখন বাজারে ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
এদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, সারাদেশে ২০০টি পাঁচ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘প্যাডি সাইলো’ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকার ১৪ শতাংশ আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান কিনছে। যে কারণে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে চাতাল মালিকদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছে। প্যাডি সাইলো নির্মাণ করা হলে কৃষক সেখানে নিজের ধান শুকিয়ে বিক্রি করতে পারবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ধান যাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয় তা তদারকির জন্য ২০টি মনিটরিং টিম কাজ করবে। তারা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করবে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটি কৃষকদের স্বার্থে সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, স্বচ্ছতার সঙ্গে ধান সংরক্ষণ এবং চাল আমদানি বন্ধের সুপারিশ করেছে। বৈঠকে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে ভেজালবিরোধী অভিযান সারাবছর অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম শক্তিশালী করতে লোকবল বাড়ানো এবং প্রতিটি জেলায় এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়।