আরও দুই হাজার চিকিৎসক এবং তিন হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও রেডিওগ্রাফার নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার, যার মধ্য দিয়ে একমাসের মধ্যে দেশে রেকর্ড সংখ্যক ১০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর নিয়োগ হবে।
করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় গত ৪ মে দুই হাজার চিকিৎসক এবং ৭ মে পাঁচ হাজার ৫৪ নার্স নিয়োগ দেয় সরকার।
এখন তিন হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও রেডিওগ্রাফার নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও রেডিওগ্রাফার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা ঈদের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছি। এখন দ্রুততার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ চলছে।
“সব মিলিয়ে এক মাসের মধ্যেই ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ ১০ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের রেকর্ড হবে, যা আগে কখনোই হয়নি।”
নতুন নিয়োগ পেতে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান খান বলেন, এদের মধ্যে ১২০০ টেকনোলজিস্ট, ১৬৫০ টেকনিশিয়ান ও ১৫০ জন রেডিওগ্রাফার।
যতদিন মহামারী থাকবে ততদিন এরা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকার পর মহামারী কেটে গেলে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ল্যাবে তাদের পদায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বিষয়টা ইতোমধ্যেই আমরা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, অর্থসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত। এদের মধ্যে সমন্বয় করে কীভাবে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যায় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে।”
আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।
হাবিবুর রহমান খান বলেন, “আমরা একটা সিগন্যাল পেয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেন ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দেন। উনি হয়ত দেখছেন যে, স্বাস্থ্য খাতকে আরও গতিশীল করার দরকার আছে। যার কারণে উনি প্রতিনিয়তই আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।
“আরও দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে। এখন আমাদের কাজ হল এটাকে এগিয়ে নেওয়া। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করে এটি এগিয়ে নিতে হবে।”
বাংলাদেশ এর আগে একসঙ্গে এত বেশি সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ হয়নি।
হাবিবুর রহমান খান জানান, এর আগে ২০১৪ সালে ৬৩০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার। গত ডিসেম্বরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল পৌনে পাঁচ হাজারের মতো চিকিৎসক।
“বিসিএসের মাধ্যমে প্রতিবছর ২০০ থেকে ৪০০ এর মতো ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে ৬৩০০ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়।”
একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগকে ‘বিরল’ ঘটনা হিসেবে দেখছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এর কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন ১০ হাজার নেবেন। ডাক্তার যে নিয়োগ হয়েছে এটা কিন্তু মেধাক্রম অনুযায়ী। যে নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটাও মেধা অনুযায়ী। এখানে কোনও তদ্বির, কোনও কিছু চলে নাই।”
তিনি বলেন, “এর সবই সম্ভব হচ্ছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক মানসিকতার জন্য। ডাক্তার নিয়োগের বিষয় উনি আগেই বলেছিলেন এবং উনার নির্দেশেই হচ্ছে। তিনি নিজে তদারকি ও দেখভাল করার কারণে আমরা একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়েছি বলে আমার মনে হয়।”
৩৯তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যারা নিয়োগ পাননি তাদের মধ্য থেকে দুই হাজার চিকিৎসককে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগের জন্য গত ৩০ এপ্রিল সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এছাড়া ৫ হাজার ৫৪ জনকে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
এরপর এক সপ্তাহের মাথায় এদের নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর কাজে যোগ দিয়েছেন তারা। কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে।
আরও যে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কাজ এগিয়ে চলছে তাদেরও ৩৯তম বিসিএস থেকেই নিয়োগ করা হতে পারে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নতুন নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক তাওফিফ ইবনে আহবাব সিলেটে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১২ই মে আমি সিলেট সিভিল সার্জন অফিসে যোগ দেওয়ার পরদিন থেকে এই হাসপাতালে সেবা দিচ্ছি। চাকরির শুরুতেই মহামারীর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হতে পেরে গর্বিত অনুভব করছি।”
করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা প্রদান এবং নিজেদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।