নীলফামারী: দীর্ঘ ৬৫ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে বাংলাদেশের রেল ইঞ্জিনের ট্রায়াল শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনের ১ কিলোমিটার দূরে ফিতা কেটে ইঞ্জিনটির যাত্রা উদ্বোধন করেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী।
উদ্বোধনের পর পরই ট্রায়াল ইঞ্জিনটি ৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নোম্যান্স ল্যান্ড ৩২/৯ পিলারের কাছে পৌঁছায়। এসময় রেললাইনের দুই ধারে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। পরে সেখানে উভয় দেশের রেলের কর্মকর্তারা বৈঠকে মিলিত হন। এতে বাংলাদেশের পক্ষে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আল-ফাত্তাহ মাসুদউর রহমান ও ভারতের পক্ষে ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার ভিকে মিনা নেতৃত্ব দেন। এসময় রেলের পশ্চিমাঞ্চল জোনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, পাকশি বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. শাহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় রেলের পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহনের জন্য রেলপথটির উদ্বোধন করবেন। পরে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে এ রুটে।
এরই মধ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথ সংযোগের স্থাপনের কাজ শেষ করেছে দুই দেশ। গত ৮ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে ভারতের রেলওয়ের বিশেষজ্ঞ দল একটি রেল ইঞ্জিন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১০ মিনিট অবস্থানের পর আবার তারা ফিরে যান।
রেলের পশ্চিমাঞ্চল জোনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, দীর্ঘ ৬৫ বছর পর আবার এ রেললাইন দিয়ে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের নব দিগন্তের সূচনা হবে।
চলতি বছরের ২৮ আগস্ট চিলাহাটির জিরো পয়েন্টে ভারত-বাংলাদেশ সংযোগস্থলে রেলপথের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ পথে রেল চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। করোনা পরিস্থিতি একই রকম থাকলে উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি হবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাক-ভারত বিভক্তের পরও এ পথে রেল চালু ছিল। সে সময়ে এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করত যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয় দুই দেশের মধ্যে রেল চলাচল। পরিত্যক্ত রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সরকার। রেলপথটি চালু করতে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ ও ২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপলাইন নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো। কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
সীমান্ত ছোঁয়া এলাকায় বাংলাদেশ রেলের উপস্থিতিতে উভয় পাশে ভিড় করেছেন দুই দেশের উৎসুক মানুষ। তারা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রেল চলাচল দেখতে। সীমান্তের দুই পাশে দাঁড়িয়ে তারা উপভোগ করেন স্বপ্নপূরণের সন্ধিক্ষণের দৃশ্যটি।