চীনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ট্রায়াল বাংলাদেশে কেন ?

203829chaina_corona_vaccine_kk

চীনের সিনোভেক বায়োটেক কম্পানির তৈরি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের (করোনাভেক) দুইটি ধাপের ট্রায়াল এরই মধ্যে সেখানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ এবার বাজারজাত করার আগের ধাপে মানবদেহে চূড়ান্ত পরীক্ষার পালা৷ আর সেই চূড়ান্ত তথা তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে বাংলাদেশে। মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাংলাদেশে পরীক্ষা করবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)৷ এজন্য নৈতিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)৷

এনিয়ে আইসিডিডিআর,বি এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে কথা বলেনি৷ জানা গেছে, চুক্তির শর্তের কারণে ট্রায়াল শুরুর আগে তারা কথা বলতে পারবে না৷ ট্রায়াল শুরু হলে তারা সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টা জানাবে৷

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, যে হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে তাদের সাথে চুক্তি হচ্ছে৷ আরো কিছু কাজ এখন বাকি আছে৷ তিনি জানান, ‘দুই পক্ষের আগ্রহেই ট্রায়ালের এই চুক্তি হয়েছে৷ আইসিডিডিআর,বি এর আগেও ওই চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন যৌথ গবেষণার কাজ করেছে৷’

বিএমআরসির পরিচালক মাহমুদ উজ জাহান জানান, ‘তৃতীয় ধাপের এই পরীক্ষা সর্বশেষ ধাপ৷ এটা সম্পন্ন হলে জানা যাবে যে করোনা প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন মানবদেহে কার্যকর হবে কিনা৷ আমাদের কাছে আইসিডিডিআর,বি প্রটোকল জমা দিয়েছিল৷ ন্যাশনাল এথিকস কমিটি এথিক্যালি অনুমোদন দিয়েছে৷’

কিন্তু এখনো আরো কিছু অনুমোদন লাগবে৷ তার মধ্যে রয়েছে ওষুধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আর যে হাসপাতালগুলোতে কাজ হবে তাদের অনুমোদন৷ এছাড়া কিছু রিএজেন্ট আনারও অনুমোদন দরকার হবে৷

ট্রায়াল কীভাবে হবে ?

যেসব হাসাপতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ট্রায়াল হবে সেগুলো হলো- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিট-১, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতাল৷ হাসপাতালগুলোর চার হাজার ২০০ কর্মী এই পরীক্ষার আওতায় থাকবেন৷ সবার শরীরেরই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে৷

তবে করোনার ভ্যাকসিন ‘করোনাভেক’ প্রয়োগ হবে তাদের অর্ধেক দুই হাজার ১০০ জনের ওপর৷ বাকি দুই হাজার ১০০ কর্মীকে নিরপেক্ষ কোনো ভ্যাকসিন দেয়া হবে৷ কিন্তু তাদের কেউই জানবেন না কার শরীরে করোনা ভ্যাকসিন আর কার শরীরে অন্য ভ্যাকসিন৷ নির্দিষ্ট সময় পরে এর কার্যকারিতা বোঝা যাবে৷ করোনা ভ্যাকসিনের প্রভাব এবং যাদের দেয়া হয়নি তাদের অবস্থা তুলনা করা হবে৷

এই ট্রায়ালে মোট ১৮ মাস সময় লাগবে৷ সব প্রক্রিয়া শেষ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে ট্রায়ালের কাজ শুরু হতে পারে বলে জানান মাহমুদ উজ জাহান৷ তবে সেটা নির্ভর করছে আইসিডিডিআর,বি-এর ওপর৷ ট্রায়ালের সময় চীনা বিশেষজ্ঞরাও বাংলাদেশে থাকবেন৷ যাদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ হবে তাদের সেফটি নিশ্চিত করা হবে, তাদের ফলোআপে রাখা হবে৷ তাদের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে কি করা হবে তাও আগে থেকেই ঠিক করা আছে৷

বাংলাদেশে ট্রায়াল কেন ?

আইসিডিডিআর,বি-এর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তৃতীয় পর্যায়ের এই ট্রায়ালে অনেক লোকের প্রয়োজন হয়৷ তাই তারা জনবহুল দেশকে বেছে নেয়৷ এখন ব্রাজিলে এরইমধ্যে থার্ড স্টেজ ট্রায়াল চলছে ছয় হাজার ৭০০ জনের ওপর৷

মাহমুদ উজ জাহান বলেন, ‘এটা হলো বাজারজাত করার আগের ধাপ৷ এটা সফল হলেই তারা এই ভ্যাকসিন বাজারজাত শুরু করবে৷ আর বাংলাদেশে এই ট্রায়ালের সুযোগ দেয়ায় তারা বাংলাদেশকে কিছু ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেবে৷ কিছু দেবে লো কস্টে৷ আর এখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্ল্যান্টও স্থাপন করবে তারা৷ ফলে বাংলাদেশে ভ্যাকসিনটি কম দামে ও দ্রুত পাওয়া যাবে৷’

আইসিডিডিআর,বি-এর ওই কর্মকর্তা জানান, সিনোভেক বায়োটেক একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান৷ অতীতে তাদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতায় তাই প্রতীয়মান হয়েছে৷

আইসিডিডিআর,বি-এর মিডিয়া ম্যানেজার তারিফ হাসান বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমকে এখনো জানানোর সময় আসেনি৷ আমরা সময়মতো বিস্তারিত জানাব৷

Pin It