চোখের নিচে পড়া ভাঁজ পড়া কমাতে জানা থাকা চাই সঠিক প্রসাধনীর ব্যবহার।
আর মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে চোখের ওপর। উজ্জ্বল চোখ, চোখের ত্বক টানটান ও সতেজ থাকা বয়সের ছাপ ঢেকে তারুণ্য ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন ‘অ্যান্টি-এইজিং’ উপাদান কার্যকর ভূমিকা রাখে।
রেটিনল: রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের রূপ বিশেষজ্ঞ হানা হং’য়ের পরামর্শ হল, চোখের ত্বকের যত্ন নিতে সঠিক পণ্য ব্যবহার করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রেটিনল সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
অধিকাংশ ‘অ্যান্টি এইজিং’ প্রসাধনীতে রেটিনল ব্যবহার করা হয়। কারণ এর সক্রিয় উপাদান সহজেই ত্বকের কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং ত্বকে টানটানভাব আনে।
ভিটামিন সি: চোখের চারপাশের কালো দাগ কমাতে ভিটামিন সি উপকারী। সূর্যালোক, নীল আলো এবং জারণের চাপ ত্বকে বয়সের ছাপ, দাগ ছোপ ও বলিরেখা সৃষ্টি করে।
ভিটামিন সি’র মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ‘ফ্রি রেডিকেল’ থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
চোখের চারপাশের কালচেভাব কমিয়ে তারুণ্য ফুটিয়ে তুলতে ভিটামিন সি কার্যকর।
এসপিএফ: রোদে বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিয়মিত সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বকে অকালে বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি কমে। সূর্যালোক ত্বকে পোড়াভাব সৃষ্টি করে যা স্থিতিস্থাপকতা কমায়। ফলে ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন বাড়ে ও দেখা দেয় অকাল বলিরেখা।
চোখের চারপাশের ত্বক ভালো রাখতে আলাদা সানব্লক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে চোখের নিচের ত্বক পাতলা হওয়াতে যে সানব্লক ক্রিম ব্যবহারে সমস্যা হয় না সেটা বেছে নিতে হবে।
“ভালো বিষয় হল, ভিটামিন সি, সানস্ক্রিন এবং রেটিনল একসঙ্গে ব্যবহার করা যায়,” বলেন নিউ ইয়র্কের বোর্ড প্রত্যয়িত ত্বক বিশেষজ্ঞ মেলিসা কাঞ্চানাপুমি লেভিন।
তার কথায়, “রেটিনল ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে এবং বয়সের ছাপ যেমন- সুক্ষ্ম রেখা নিরাময়ে সাহায্য করে। অন্যদিকে ভিটামিন সি এবং সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।”
বলিরেখা রোধ করার পন্থা
মুখের ব্যায়াম: নির্দিষ্ট কিছু মুখের ব্যায়াম ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চোখের নিচের ত্বকে টানটানভাব আনে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ফেইশল স্পা’র প্রতিষ্ঠান ‘টেইলর ওর্ডেন স্কিন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সৌন্দর্যবিদ টেইলন ওর্ডেন বলেন, “মুখের ব্যায়াম, মুখ মালিশ করারই একটা অংশ যা মুখের পেশিকে গতিশীল ও দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে। যারা বোটক্সের মতো সেবা নিতে ভয় পান তাদের জন্য মুখের ব্যায়াম ত্বক সুন্দর রাখার ভালো উপায়।”
ইউটিউব, নানান ধরনের অ্যাপ অথবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিজেই ঘরে বসে এই ধরনের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ওর্ডেন বলেন, “ভালো ফল পেতে নিয়ম বেঁধে সপ্তাহে ছয়দিন এই ধরনের ব্যায়াম করা উচিভ। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়।”
আলতোভাবে এক্সফলিয়েট করা: চোখের চারপাশের ত্বকও এক্সফলিয়েট করতে হবে। তবে আলতোভাবে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের বোর্ড প্রত্যয়ত ত্বক বিশেষজ্ঞ হ্যাডলে কিং বলেন, “চোখের নিচের ত্বকের মতো নাজুক জায়গার যত্ন নিতে হবে আলতোভাবে। রাসায়নিক বা দানাদার মৃদু এক্সফলিয়েটর, হালকা চাপ প্রয়োগ করে ত্বক এক্সফলিয়েট করতে হবে। এরপরে অবশ্যই ত্বক সুরক্ষিত রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।”
আলতোভাবে মেইকআপ তোলা: চোখের নিচের ত্বক অনেক বেশি নাজুক হওয়াতে সারা মুখের অন্যান্য অংশের মতো এখানে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
মেইকআপ তোলার সময় ওয়াইপ্স বা হাত দিয়ে খুব বেশি ঘষামাজা না করে আলতোভাবে তুলে নিতে হবে।
চোখের মেইকাপ তুলতে বিশেষজ্ঞরা ক্লিঞ্জিং বাম গোলাকারভাবে ঘুরিয়ে মেইকআপ গলা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তুলে ফেলার পরামর্শ দেন। এরপর দুধের মতো তরল উপাদান দিয়ে মুখ ধোয়া ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ত্বককে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
চোখের নিচের জন্য প্রসাধনী আলতোভাবে ব্যবহার করা: চোখের নিচের অংশে প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। যে কোনো প্রসাধনী এখানে ব্যবহার করতে হবে অনামিকার সাহায্যে। আর ত্বকে পণ্য কিছুটা শুষে নিলে হালকা চাপ দিয়ে মালিশ করতে হবে।
বালিশের সিল্ক কাভার ও ‘আই মাস্ক’: নিউ ইয়র্ক’য়ের কসমেটিক চিকিৎসক এবং বোর্ড প্রত্যয়িত ‘ফেইশল প্লাস্টিক সার্জন’ কন্সটান্টিন ভাসিউকেভিচ বলেন, “বয়সের ছাপ অনেকটাই নির্ভর করে ঘুমের সময় ত্বক বালিশের কভারে কতটা চাপ ও ঘষা খাচ্ছে তার ওপর।”
স্যাটিন বা সিল্কের বালিশ কভার ব্যবহার করা ও ঘুমের সময় চোখ ‘মাস্ক’ দিয়ে ঢেকে রাখা ত্বককে সুরক্ষিত রাখে এবং অকালে ভাঁজ পড়া বা বয়সের ছাপ থেকে বাঁচায়।