‘চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই’: সাইফউদ্দিন

saifuddin-samakal-5ce25a4b3de09

দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। একটু একটু করে উত্তাপও বাড়ছে তার। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপের মৌতাতে আচ্ছন্ন টাইগাররা। ক্রিকেটের এই শ্রেষ্ঠ মঞ্চে যাওয়ার আগে দলগত পরিকল্পনার বাইরেও ক্রিকেটাররা নিজেদের তৈরি করেছেন নিজের মতো করেই। দেশ ছাড়ার আগে সমকালের সঙ্গে বিশ্বকাপ আড্ডায় নিজেদের সে ভাবনাগুলোই তুলে ধরেছেন টাইগাররা। বিশ্বকাপযাত্রী টাইগারদের ধারাবাহিক এই সাক্ষাৎকার পর্বে আজ থাকছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

আপনার প্রথম বিশ্বকাপ, নিশ্চয়ই খেলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন?

সাইফউদ্দিন: যতক্ষণ পর্যন্ত না মাঠে নামছি ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো উত্তেজনা দেখাব না। অপেক্ষা করছি, দেখা যাক কী হয়।

নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করছেন?

সাইফউদ্দিন: সবারই চেষ্টা থাকে প্রথম বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখার। আমারও ইচ্ছা আছে ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই ভালো করা। নিজেকে যতটা প্রস্তুত করা যায় আমি করছি। আমার প্রথম বিশ্বকাপ এটা, এজন্য বাড়তি কিছু করে দেখাতে হবে। এই চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে চাই।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন তো আগের মতো পেস বোলারদের অনুকূলে থাকে না, ব্যাটিংবান্ধব হয়, এজন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন?

সাইফউদ্দিন: আমি ইংল্যান্ডে খেলেছি, ট্রু উইকেট হয়। ভালো বল করলে উইকেট পাওয়া যায়। আসলে ভালো করলে যে কোনো জায়গায় সাফল্য পাওয়া যায়। ইংল্যান্ডে এখন অনেক রানও হয়। ভালো ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেট। বিশ্বকাপটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিংই হবে।

আপনাদের পেস বোলিং অ্যাটাক কতটা ভালো?

সাইফউদ্দিন: কিছুদিন আগে আমি খেলার চ্যানেলে ওয়ানডে পাওয়ার প্লেতে বোলারদের ইকোনমি রেট দেখছিলাম। সেখানে বাংলাদেশ দুই বা তিনে আছে। অবশ্যই আমরা ভালো করেছি বিধায় ওই পর্যায়ে বাংলাদেশের নামটা এসেছে। আমরা জানি, মুস্তাফিজ অনেক ভালো একজন বোলার। মাশরাফি ভাই অনেক অভিজ্ঞ। রুবেল ভাই গেমস চেঞ্জার, গেম উইনার। গত বিশ্বকাপে আমরা দেখেছি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা উনি জিতিয়েছেন। শুধু ওইটা না, আরও অনেক ম্যাচে উনি ভালো করেছেন। আমি যদি সুযোগ পাই তাহলে চেষ্টা করব ভালো কিছু করার। সবাই যদি সুস্থ থাকে, তাহলে আমাদের পেস বোলিং বিভাগ দারুণ কাজ করবে।

প্রতিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলার গুরুদায়িত্ব থাকবে পেস বোলারদের ওপর, তার জন্য কতটা প্রস্তুত?

সাইফউদ্দিন: সত্যি বলতে, আমাদের মধ্যে শুধু রুবেল ভাই ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেন। পাশাপাশি আমরা যারা আছি তারা ১৩৫, ১৩২ বা ১৩০ গতিতে বল করি। আমাদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, আমাদের লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বল করতে হবে। যেমন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া দলের পেসাররা ১৪০ বা ১৫০ গতিতে বল করে, তারা একটু বেশি সুবিধা পাবে। আমাদের শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কৌশলী হতে হবে।

বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার মানসিক প্রস্তুতি কেমন?

সাইফউদ্দিন: আমি যখন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলি তখন থেকেই একটা অভ্যাস হয়ে গেছে, যে দলের বিপক্ষে খেলব তাদের সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে চিন্তা করি। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান ও বোলারদের নিয়ে কমপক্ষে ১০ মিনিট ধ্যান করি। এই অভ্যাসটা আমি বিশ্বকাপেও ধরে রাখব। চিন্তা করব, কোন বোলারের দুর্বল জায়গা কোনটি, কোন ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা কী ধরনের বলে। এক্ষেত্রে ভিডিও অ্যানালিস্টের সহযোগিতা নিই, ফ্রি সময়ে উনার রুমে গিয়ে প্রতিপক্ষ দলের ভিডিও দেখি। সুতরাং প্রস্তুতি আগে যেভাবে নিয়েছি, এবারও সেভাবে নেব।

নিউজিল্যান্ডে আপনি কিছুটা সফল ছিলেন? ওই কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কতটা কাজে দেবে?

সাইফউদ্দিন: নিউজিল্যান্ডে দল হিসেবে ভালো হয়নি। ব্যক্তিগত দিক থেকে আমার কিছু রান আছে। আমাকে বোলিং নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে। কোর্টনি ওয়ালশ জানেন, আমার দুর্বলতাগুলো কোথায়। তিনি আমাকে নিশ্চয়ই তৈরি হতে সাহায্য করবেন।

লিস্টারশায়ারে কন্ডিশনিং ক্যাম্পের প্রস্তুতিটা খুব কাজে দেবে নিশ্চয়ই?

সাইফউদ্দিন: বিশ্বকাপের আগে ওই ক্যাম্পটা দল সমন্বয়ে দারুণ কাজে দেবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হবে। আরও একটু বেশি সময় ওখানে ক্যাম্প করতে পারলে সুবিধা হতো। তবে যেটুকু সময় আছে, যে সময়টুকু পাব নিজেদের জন্য ভালো।

ভালো কিছু করার খুব তাড়না পান?

সাইফউদ্দিন: আমি কখনও পরিতৃপ্ত হই না। ভালো কিছু পেলে আরও ভালো করার একটা ক্ষুধা আমার মধ্যে থাকে। সব সময় নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙার চেষ্টা করি। আজ দুই উইকেট পেয়েছি কাল চার উইকেট পেতে হবে। আজ ৫০ করেছি কাল ৬০ করতে হবে, আমার চিন্তাভাবনা এমন থাকে। যখন আমি কোনো ম্যাচ শেষ করি তখন পণ করি, আগামী ম্যাচে আরও ভালো খেলব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি যখন মাঠে নামি জেতার জন্য নামি।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপমুখী দল। সব সময়ই বিশ্বকাপে ভালো খেলে। এবারের দলও কি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম?

সাইফউদ্দিন: সত্যি কথা বলতে, ২০০৭ সালের পর থেকে ওয়ানডেতে আমরা খুবই ভালো একটা দল। বড় দল। দেশে ও বিদেশে যে কোনো দলকে আমরা হারানোর সামর্থ্য রাখি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছি। বিশ্বকাপে আমাদের রেকর্ড ভালো। এবারও চেষ্টা থাকবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার। খুবই ভারসাম্য একটা দল আমরা। সিনিয়রদের অনেকেই ২০০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। পাশাপাশি আমরা যারা তরুণ আছি তারাও ভালো ছন্দে আছি। মিরাজ, মুস্তাফিজ ও আমি নতুন খেলব বিশ্বকাপে। যদিও মুস্তাফিজ অনেক বড় বড় টুর্নামেন্টে খেলে এসেছে। এর পাশাপাশি সাব্বির রুম্মন ভাই, সৌম্য সরকার সবাই ভালো। ইনশাআল্লাহ আমরা আশাবাদী, ভালো কিছু করব।

অলরাউন্ডার হিসেবে জাতীয় দলে খেলেন, দ্বৈত ভূমিকায় আত্মবিশ্বাস কি বেশি থাকে?

সাইফউদ্দিন: জাতীয় দলে আমি এখনও নিয়মিত নই। সবে দু-তিনটা সিরিজ খেলেছি। তিন ফরম্যাটে যখন চার-পাঁচ বছর খেলব তখনই বলব জাতীয় দলে নিয়মিত। এখনই রিল্যাক্স হওয়ার কিছু নেই। আমি মনে করি, দলকে অনেক কিছু দিতে হবে। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সেখানে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারি, তাহলে পরে আরও অনেক সুযোগ পাব। আমি চাই, অনেকদিন জাতীয় দলে খেলতে।

অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের কাছে কোনটা বেশি পছন্দ, ব্যাটিং না বোলিং?

সাইফউদ্দিন: সত্যি বলতে আমি বোলিংটা খুব উপভোগ করি। ব্যাটিং আমার ব্যাকআপ হ্যান্ড। যদিও প্র্যাকটিসে দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিই। অলরাউন্ডারদের একটু সুবিধা থাকে, বোলিং বা ব্যাটিং ভালো করলেই হয়। কিন্তু আমি একটাকে অন্যটার থেকে আলাদা করতে পারি না। দুই জায়গাতেই আমি সেরা হতে চাই। যেটাতে খারাপ করি সেটা নিয়ে মন খারাপ থাকে।

অলরাউন্ডারদের সুবিধাও তো বেশি থাকে?

সাইফউদ্দিন: হ্যাঁ, থাকে। ম্যাচে যে কোনো একটা বিভাগে ভালো করেও টিকে থাকা যায়। তবে বেশিরভাগ সময়ই দুটিতে ভালো করতে হয়। কারণ, এটাই দল চায় অলরাউন্ডারের কাছ থেকে। এজন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

Pin It