সেদিন স্কুল থেকে ফিরে বারান্দায় বসে বসে ছবি আঁকছিলো মৌমি। একটা টুকটুকে লাল ফুল আর একটা প্রজাপতির ছবি। লাল, নীল, হলুদ নকশা করা ডানা।
ফুলের পাশে প্রজাপতিটা এঁকে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলো মৌমি। বাহ্ কী সুন্দর হয়েছে! শুধু একটা ডানায় আর দুটো ফুটকি দিলেই আঁকা শেষ হবে। ভাবতে ভাবতেই মৌমি যেই না খাতায় তুলি ছোঁয়াতে যাবে, দেখে খাতার পাতায় আঁকা প্রজাপতিটা ডানা নাড়াচ্ছে!
মৌমি অবাক। চোখ কচলে ভালো করে তাকায়, নাহ্ সত্যিই! ডানা নাড়াতে নাড়াতে প্রজাপতিটা খাতার বাইরে বেরিয়ে এসেছে!
বিস্ময়ে মৌমি প্রথমে কথা বলতে পারছিলো না। তারপর একটু সয়ে নিয়ে বললো, আরে! তুমি দেখছি জ্যান্ত!
হ্যাঁ। আমি জ্যান্তই তো। ডানা নেড়ে বললো প্রজাপতি।
কিন্তু আমি তো তোমার ছবি খাতায় আঁকছিলাম!
সে আঁকছিলে। তুমি আঁকছিলে বলেই তো আমি এখন ডানা মেললাম।
মৌমির মুখে কথা সরে না। টুকটুকে লাল গোলাপটার পাশে কী যত্ন করেই না ও প্রজাপতিটা এঁকেছিলো। ম্যাম দেখলে নিশ্চয়ই ওকে ভেরি গুড দিতো। মার্কস ও নিশ্চয়ই দিতো দশে দশ! গতদিন ক্লাসে প্রজাপতি আঁকা শিখিয়েছেন ম্যাম।
প্রজাপতিটা ততক্ষণে খাতা ছেড়ে বারান্দার গ্রিলে লতানো ফুলের ওপর গিয়ে বসেছে। মৌমি বললো, ওকি! তুমি ওখানে গেলে কেনো?
প্রজাপতিটা রঙিন পাখাটা দুলিয়ে একটু উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে আরেকটা নীল ফুলের ওপর বসতে বসতে বললো, বাব্বাহ্ কাল থেকে তোমার খাতায় চাপা পড়ে থাকতে থাকতে আমার দম বের হয়ে যাচ্ছিলো।
মৌমির মনে পড়লো কাল বিকেলে ও পেন্সিল দিয়ে প্রজাপতির স্কেচ এঁকে রেখেছিলো শুধু। বললো, কাল তো আমি তোমায় আঁকিইনি!
এঁকেছিলে! কেবল পেন্সিল দিয়ে আমার আকৃতিটা এঁকে ফেলে রেখেছিলে! কী পঁচা তুমি!
আসলে আমি তো জানতাম না, রঙ মাখালেই ডানা মেলবে তুমি!
আচ্ছা এখানে এই খয়েরি ফুটকিগুলো না দিয়ে কমলা দিলে না কেন? তাহলে আমাকে আরো কতো সুন্দর দেখাতো- নিজের ডানা দেখালো প্রজাপতি। কণ্ঠে অভিমান।
প্রজাপতির কথায় একটু অপ্রস্তুত হলো মৌমি। বললো, আসলে আমি কয়দিন আগে দেখা একটা প্রজাপতির মতো আঁকতে চেয়েছিলাম তো…।
ওহ্! নকল করতে চেয়েছিলে! নিজের মাথা খাটাতে চাও না একদম! আর এই ডানায় একদম ফুটকি দাওনি তুমি!
আমি যেই তুলিতে রঙ নিয়েছি অমনি তুমি ডানা নেড়ে উঠলে যে! এই যে দেখো খাতায় রঙ লেগে গেছে। তুমি খাতায় ফিরে এসো, আমি আরো রঙ মেখে দিচ্ছি।
দরকার নেই বাবা। তুমি যা অস্থির মেয়ে। দেখা যাবে আঁকতে গিয়ে একটু পরে আমাকে খাতায় রেখেই তুমি টিভি দেখতে চলে যাবে। তারচে এই-ই ভালো। রঙিন ডানায় উড়ে বেড়াতে বেশ লাগছে আমার।
তুমি কি এখন চলে যাবে?
হুমম। আমি এখন বাগানে গিয়ে অন্য প্রজাপতির সঙ্গে ফুলে ফুলে নাচবো।
কিন্তু তুমি চলে গেলে কাল ক্লাসে আমি ম্যামকে প্রজাপতির ছবি কিভাবে দেখাবো?
তুমি আরেকটা ছবি এঁকে নাও। আমি বরং যাই। ও হ্যাঁ আমার গায়ে খুব একটা খারাপ রঙ করোনি তুমি। একটা মাছি এইমাত্র বললো আমাকে না কী দারুণ দেখাচ্ছে! ধন্যবাদ তোমাকে।
তুমি আজ থাকো। প্লিজ…মৌমি অনুরোধ করলো।
না গো। থাকতে আমায় বলো না। ফুলের বাগানের ফুলেদের নিজেকে দেখাতে ইচ্ছে করছে খুব।
প্রজাপতিটা ডানা মেলে টা টা বলে বাইরের বিকেলের আলোয় হারিয়ে গেলো।
মৌমি ব্যাকুল কণ্ঠে, ওহ প্রজাপতি তুমি যেও না। প্লিজ। আমি তোমায় খাতায় আটকে রাখবো না। তুমি আমাদের এই বারান্দার বাগানে থাকো…প্লিজ প্লিজ…বলে কেঁদে ফেলে।
কী হয়েছে সোনা মা আমার? মায়ের আদুরে স্পর্শে মৌমি ওর জল ভেজা চোখ মেলে মাকে দেখে প্রজাপতির কথা তার উড়ে যাওয়ার কথা বলে।
মা হাসেন, বোকা মেয়ে স্বপ্ন দেখেছো তুমি!
মায়ের কথা বিশ্বাস হয় না মৌমির। এই যে খাতায় একটু রঙ লেগে আছে গোলাপটার পাশে সাদা পাতায়!
এসো আমরা আরেকটা প্রজাপতি আঁকি- বলে মা খাতার ওপর পেন্সিল দিয়ে মস্তো ডানার একটা প্রজাপতি এঁকে দিলো।
তুলিতে রঙ মাখাতে মাখাতে মৌমি ভাবে- এ প্রজাপতিটাও যদি উড়ে যায় তখন কী হবে!