রাজধানীর বৃহত্তর উত্তরার সাতটি থানা এলাকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
রোববার (৩০ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানে গুম হওয়া ছাত্র নেতা নূর হোসেন হিরুর বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিন আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল ও নগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু গুম হওয়া ছাত্রনেতার বাসায় যান।
তাবিথ আউয়াল আসার খবরে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এম কফিল উদ্দিন ও এস এম জাহাঙ্গীরও নূরের বাসায় যান। এ সময় উত্তরার সাতটি থানা এলাকার ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী জাহাঙ্গীরকে বাসায় ঢুকতে বাধা দেন। বাধা দেওয়ার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর ও তার লোকজনের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের হট্টগোল হয়। পরে তাবিথ আউয়ালের হস্তক্ষেপে বাসায় ঢুকলেও একটি রুমের মধ্যে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর।
এ সময় ছাত্রদলের নেতারা জাহাঙ্গীরের উপস্থিতিতে তাবিথ আউয়াল ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ করে উত্তরায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রায় ১৫ জন ছাত্রদল নেতার মাথা ফাটানোর বিষয়টি তুলে ধরেন।
এছাড়া গুম হওয়া ছাত্রনেতা হিরুর বড় ভাই আমজাদ হোসেন তার নিজ ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও তাকে মনোনয়ন না দিতে দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর বিরোধিতা করেন জাহাঙ্গীর। এতদিন হিরুর খবর না নিলেও আজ কেন হিরুর কথা মনে পড়ছে, ঢাকা-১৮ আসন আমরা তাকে লিজ দেইনি।
হিরুর বড় ভাই আমজাদকে বিএনপির কমিটি থেকে বাদ দেন জাহাঙ্গীর। এ কারণে বিক্ষুব্ধ নেতারা এ জাতীয় অনেক অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরকে এখানে কেন আনা হয়েছে বা এ বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের কাছে নালিশ তুলে ধরেন ছাত্রদলের নেতারা।
পরে তাবিথ আউয়ালের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও জাহাঙ্গীরের বের হওয়ার সময়ও বিক্ষুদ্ধ ছাত্রনেতারা তাকে ধাওয়া করেন। এ সময় পেছন থেকে বিএনপি নেতা আঞ্জু নিজে হার্টের রোগী জানিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত হতে সবাইকে বার বার অনুরোধ করতে থাকেন।
এর আগে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে জাহাঙ্গীরের লোকজন উত্তরা ছাত্রদলের বেশ কয়েক জন ছাত্রনেতার মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে। এ ঘঠনার প্রতিবাদে বৃহত্তর উত্তরার তথা ঢাকা-১৮ আসনের ৪০ জন পদধারি নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তার হাতে জাহাঙ্গীরের অপকর্মের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় এ নিয়ে আর কোনো সুরাহা হয়নি। এছাড়া ছাত্রদলের নেতারা গুলশানে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন।
যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে জানতে তাবিথ আউয়াল ও মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুকে এসএমএস এবং মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কেউ রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএসের জবাব দেননি তারা। যদিও এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সংরক্ষণে রয়েছে।
এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাবিথ আউয়াল বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন, উত্তরার কিছু নেতাকর্মীকে দলে পদ দেওয়ার কথা ছিল। তারা তাবিথ আউয়ালের কাছে জানতে চেয়েছিল, তাদের কেন পদ দেওয়া হয়নি। পরে তাদের তাবিথ আউয়াল নিজেই শান্ত করেছেন।
হিরুর ভাই আমজাদকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন না দেওয়ার অভিযোগের জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, আমজাদতো ফরমই কেনেননি। তাহলে তিনি প্রার্থী হবে কীভাবে। হিরুর পরিবারের সঙ্গেও তার যোগাযোগ আছে বলে জানান তিনি।
হট্টগোলের ভিডিও আছে জানালে জাহাঙ্গীর বলেন, একটি ছোট রুমে অনেক লোক প্রবেশ করলে এমনিতেই হট্টগোল হয়। এখানে আমার সঙ্গে কিছু হয়নি। আর আমাদের কেউ অবরুদ্ধও করে রাখেনি। এছাড়া আমার সঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ নেতাকর্মী ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে নেতারা উত্তরায় গিয়েছিলেন। সেখানে কি হয়েছে তা আমি জানি না।