ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার যে দাবি বিক্ষুব্ধ নেতারা তুলেছেন, তাদের হতাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
“এই দাবি মানাটা দলের পক্ষে কষ্টকর, অন্যায় দাবি তো মানা সম্ভব না কারও পক্ষে,” বলেছেন তিনি।
রোববার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গয়েশ্বর যখন একথা সাংবাদিকদের বলেন, তার ঘণ্টা দুয়েক আগেই বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা ওই কার্যালয়ের সামনে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
পাঁচ বছর আগে গঠিত ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গত ৬ জুন ভেঙে দেওয়ার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয় সংগঠনটির একদল নেতার মধ্যে।
নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যে তিনটি যোগ্যতা নির্ধারণী শর্ত যোগ করা হয়েছে তা নিয়ে আপত্তি তাদের। ওই শর্তে বলা হয়েছে, নতুন কমিটিতে নেতা হতে হলে অবশ্যই ২০০০ সালের পরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
এই শর্ত পূরণ করতে গেলে বর্তমানে সক্রিয় অনেক ছাত্রদল নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারবেন না বলে তাদের ক্ষোভ। গত ১১ জুন তারা নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে।
তারপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলে তারা ওই স্থান ছেড়ে গেলেও রোববার সকাল ১১টায় পুনরায় অবস্থান কর্মসূচিতে বসে।
দুই ঘণ্টা পর তারা উঠে গেলে ওই কার্যালয়ে থাকা বিএনপির অন্যতম নীতি-নির্ধারক গয়েশ্বরকে পেয়ে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের দাবির বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
তিনি বলেন, “অতীতে এটা হয়েছে, তাই হতে হবে, এটা থেকে আমরা পরিবর্তিত হবো না- এমন অঙ্গীকার থাকা তো ভালো না। যারা ছাত্র নাই, তাদের ছাত্র রাজনীতি করার ইচ্ছাটা সঠিক না।”
“ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করে এবং তার পরিসমাপ্তি ঘটে। আমরাও ছাত্র রাজনীতি করেছি, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং একাত্তরের যুদ্ধের পর আমাদেরও ছাত্রত্ব ছিল না। আমরা যুব রাজনীতিতে আসছি। তারপরে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেছি।
“রাজনীতির পথ চলা সামনের দিকে লক্ষ্য। এখন আমি যদি পণ করি, আজীবন ছাত্রদল করব, তাহলে তো আমি রাজনীতির লক্ষ্যে পৌঁছালাম না। এই যৌক্তিক কথাগুলো তাদের (বিক্ষুব্ধ) বুঝতে হবে।”
ছাত্রদলের কমিটিতে যাদের স্থান হবে না, তাদের অন্য কোথাও স্থান দেওয়ার আশ্বাসও দেন গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, “রাজনীতিতে তাদের ক্ষেত্র, তাদের অবস্থান সৃষ্টি করার দায়িত্ব আমাদের আছে। তারা যেন আগামী দিনে রাজনীতিতে তাদের শ্রম-মেধা দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন।
“যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদেরকে দল পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাই। তারা রাজনৈতিক ক্ষেত্র, রাজনৈতিক অবস্থানে রাজনীতি করতে পারবে। আমরা সেই সুযোগটা তৈরি করে দেব এবং সেই ক্ষেত্রে তাদেরকে আমরা শতভাগ সহযোগিতা দেব। এটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনিও দেবেন।”
ছাত্রদলের এই সঙ্কট নিরসনে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তা এড়িয়ে যান গয়েশ্বর।
তিনি বলেন, “সিদ্ধান্তটা আমরা নিইনি। গত ৪০ বছর যাবত যারা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। তারাই ভালো বোঝেন- ছাত্রদের জন্য কী করা দরকার?”