ছাত্রলীগের গৃহদাহে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনকি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে ছাত্রলীগের বর্তমান দুই সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সহায়তার জন্য আওয়ামী লীগের অন্যতম চার নীতিনির্ধারক নেতাকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা হলেন আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর এই চার নেতা গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বি এম মোজাম্মেল হক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে দুই দফায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।
এই সময় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, অপকর্মের জন্য অতীতে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এখনও কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আগামীতেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি প্রশাসনিকভাবেও তাদের শাস্তি পেতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় ছাত্রলীগের বর্তমানের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা বলেছেন, ২০১৮ সালের ১১-১২ জুন ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ নিয়ে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের কনসার্ট অনুষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের চিত্র রীতিমতো প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে।
এদিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, সাইফুর রহমান সোহাগ এবং এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে ছাত্রলীগের সৎ, যোগ্য এবং সক্রিয় নেতাকর্মীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে ওই তালিকা জমা দেওয়ার কথা। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকেও এ ধরনের তালিকা তৈরির তাগিদ দেওয়া হবে। এই দুই তালিকা মিলিয়ে তৈরি করা হবে ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি। পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
দল গোছানোর নির্দেশ :আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় দল গোছানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময়ে উপস্থিত নেতাদের অনেকেই সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী অক্টোবরের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এ সময় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে হবে। দল গোছাতে হবে। তা ছাড়া জনগণের সমর্থন নিয়ে একটানা তিন দফায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসায় পুরনো ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ওই অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখতে হলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমারও বয়স হয়েছে। এখন তোমাদের হাতে দলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলে ওঠেন, রাজনীতি থেকে আপনার অবসরের সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। দেশ-জাতির শতভাগ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে থাকতে হবে।