ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় জমজমাট কেনাবেচা

tradee_fair_samakal-5c41fdff572c2

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ছুটির দিনে শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় ছিল। মেলা শুরুর পর দ্বিতীয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়। প্রথম ছুটির দিন ৮০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় এসেছিল। দ্বিতীয় সাপ্তাহিক মেলাপ্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ে জমে ওঠে কেনাবেচাও।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শুরু হওয়া ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার দশম দিন ছিল শুক্রবার। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কাউন্টারগুলোয় লাইন বড় হতে থাকে। বিকেলে মেলার চারদিক থেকে দর্শনার্থীর ঢল নামে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই দিকের দুই গেট থেকেই লাইন দিয়ে হেঁটে মেলায় আসতে হয় দর্শনার্থীদের। একদিকে খামারবাড়ি ও অন্যদিকে রোকেয়া সরণির আগারগাঁও সিগনাল থেকে দীর্ঘ লাইন ধরে আসেন সবাই।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তা থেকে বাণিজ্য মেলার মূল ফটকের দূরত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটার রাস্তা। এদিন বিকেলে সেই পথটুকু অতিক্রম করতে সময় লেগেছে আধাঘণ্টা। মেলার চারদিকের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট ছিল। এ কারণে অনেক দূর থেকেই দর্শনার্থীদের হেঁটে মেলাপ্রাঙ্গণে আসতে হয়।

মেলায় শুক্রবার সব বয়সের এবং শ্রেণিপেশার মানুষের ভিড় ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন নারী দর্শনার্থী। বেশিরভাগই আসেন সপরিবারে। শুধু রাজধানীবাসী নন, আসেন বিভিন্ন জেলার ক্রেতা ও দর্শনার্থীরাও।

( সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার বাণিজ্য মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় )
বগুড়া থেকে সপরিবারে আসেন সরকারি চাকরিজীবী মমিন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘সুযোগ পেলে প্রতি বছরই একবার বাণিজ্য মেলায় আসি। শুক্র ও শনিবার দুই দিন অফিস ছুটি থাকার সুযোগ নিয়ে মেলায় এসেছি। এই দুই দিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলা ঘুরে দেখব।’

তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মেলার প্যাভিলিয়নগুলোতে আরও বেশি নান্দনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। দেখে ভালো লেগেছে। মেলা থেকে বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য কিনেছি। আরও কিছু পণ্য কেনাকাটা করার ইচ্ছে আছে।

মেলায় শুক্রবার লোকসমাগম বেশি হওয়ায় পণ্য বিক্রি ছিল আগের দিনগুলোর তুলনায় বেশি। মেলার গেট থেকে বের হওয়া বেশিরভাগ ক্রেতার হাতে ছিল ব্যাগভর্তি পণ্য। কেউ কিনেছেন গৃহস্থালি সামগ্রী। আবার কেউ কেনেন নানা প্যাকেজজাত খাদ্যপণ্য। শিশুদের হাতেও ছিল ব্যাগভর্তি পছন্দের খেলনা।

মেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, মেলায় আসা দর্শনার্থীরা মেলাপ্রাঙ্গণ যেমন ঘুরে ঘুরে দেখছেন, তেমন কেনাকাটাও করেছেন। বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাউন্টারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পণ্যের দাম দিতেও দেখা যায়। মেলায় শুধু পণ্য কেনাকাটা আর ঘুরে দেখা নয়, আড্ডাও জমে বেশ। রেস্টুরেন্টগুলোতেও যারা খেতে গিয়েছেন তাদের ভিড়ের কারণে অপেক্ষায় থাকতে হয়। মেলার মাঠের পার্কগুলোয় নানা বিনোদন উপভোগ করতে শিশুদের নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন অভিভাবকরা। দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে।

জেডিপিসির প্যাভিলিয়নে বেঙ্গল ব্রাইডের বিক্রয়কর্মী হুমায়ুন বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় ছুটির দিনে কেনাবেচা অনেক বেশি হয়েছে। ক্রেতার ভিড় অনেক বেশি। প্রাণের অলটাইম প্যাভিলিয়নের বিক্রয় কর্মী ফারুক জানান, প্যাকেজের অফার পেয়ে ক্রেতাদের কেনাকাটার হিড়িক পড়েছে। তাই অন্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হয়েছে।

মেলার গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শহীদুল আলম বলেন, ছুটির দিনে মেলায় বেশি দর্শনার্থী আসে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মেলা বেশ ভালো জমবে বলে তিনি আশা করেন। তার মতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হিসেবে এ মেলার জায়গা খুবই কম হয়েছে। এতে বেশি দর্শনার্থী স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘুরে দেখতে পারছেন না।

৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া মাসব্যাপী এ মেলা শেষ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। অন্যান্য বারের মতো এবারও প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা। মেলাপ্রাঙ্গণে টিকিট কাউন্টার ছাড়াও অনলাইনেও এবার মেলার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। এবার মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের মোট ৫২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

Pin It