কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ করতে সব রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটও অংশ নেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) পঞ্চম মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কথা টেনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্ব যদি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস বা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বর্তমান শতাব্দীতে আরও তীব্রতর হতে থাকবে।
“আমাজন অরণ্যে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড এবং বাহামাসে ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে কতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে।”
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০১৮-১৯ সালজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবিকা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দুটি ফ্রন্টে লড়াই করছি। প্রথমত, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং ভবিষ্যতে শূন্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া; দ্বিতীয়ত, যে সব অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সেখানে অভিযোজন ব্যবস্থা নেওয়া।
“এই দুটি ফ্রন্টেই আমরা যদি ব্যবস্থা নিতে না পারি, তবে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে থাকবে।”
বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ না হয়েও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বেশি ক্ষতি মোকাবেলার বিষয়টি সবার সামনে আবারও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বদ্বীপ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুপেয় পানি নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
“জলবায়ুর পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে টেকসই উন্নয়ন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়েও বাংলাদেশ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলা ও সহনশীলতা বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় বাংলাদেশের ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ প্রণয়ণের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের এই লড়াইয়ে সহযোগিতা চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে সহযোগিতার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।”
গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের অনুষ্ঠানের পর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ট ট্রাম্পের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।