ডিজিটাল বিজ্ঞাপন নির্ভর ব্যবসা হলেও হার্ডওয়্যার খাতে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে ফেইসবুক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আয় হিসাব বৈঠকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, তাদের পরবর্তী পণ্য হবে রে-ব্যানের স্মার্ট চশমা।
ফেইসবুক যে ভিআর বাদেও নিজেদের হার্ডওয়্যার খাত সম্প্রসারণে আগ্রহী, সে ইঙ্গিতই মিলেছে ঘোষণাটি থেকে। জাকারবার্গ বলেছেন, “চশমাটির আইকনিক গঠন কাঠামো রয়েছে, এবং এগুলো আপনাকে কিছু পরিচ্ছন্ন কাজ করতে দেবে। তাই আমি মানুষের হাতে সেগুলো পৌঁছানোর বিষয়টি নিয়ে এবং ভবিষ্যতে পুরোপুরি অগমেন্টেড রিয়ালিটি চশমা আনার সফরে অগ্রগতি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী।”
ফেইসবুকের সানগ্লাস আনার খবর রটেছে আরও আগেই। ২০১৯ সাল থেকে শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে নানা ধরনের গুজব। সে সময় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি’কে একাধিক সূত্র জানিয়েছিল, ফেইসবুক রে-ব্যান মালিক লাক্সোটিকার সঙ্গে ‘অরিয়ন’ নামের এআই চশমা নিয়ে কাজ করছে।
চশমাগুলো পুরোপুরি ফোনের জায়গা নিতে সক্ষম বলেও খবর এসেছিল। এর মাধ্যমে কল গ্রহণ করা যাবে, তথ্য দেখা যাবে, এমনকি লাইভ স্ট্রিমও উপভোগ করা যাবে।
ফেইসবুকের আগে লাক্সেটিকার সঙ্গে জোট বেঁধেছিল গুগল। প্রতিষ্ঠানটি বাজারে নিয়ে এসেছিল নিজস্ব স্মার্ট চশমা গুগল গ্লাস। ফেইসবুকের স্মার্ট চশমার খবর আসার পর তাদের পণ্যকে গুগল গ্লাসের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন অনেকে।
উল্লেখ্য, স্ন্যাপচ্যাট মালিক স্ন্যাপের-ও স্পেকটাকল নামে স্মার্ট চশমা রয়েছে। তবে, ওই চশমাটি ফোনের উপর নির্ভর করে।
গত বছর ফেইসবুক রিয়ালিটি ল্যাবসের ভিআর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিউগো বারা নিশ্চিত করেন, ২০২১ সালেই আসছে তাদের স্মার্ট চশমা। এরপর আবারও নিরব হয়ে যায় ফেইসবুক। সম্প্রতি সে নিরবতাই ভাঙলেন জাকারবার্গ।
চশমাকে ফেইসবুকের ভবিষ্যতের চাবি বলে আখ্যা দিয়েছেন জাকারবার্গ। তিনি বলেন, ‘মেটাভার্স’ তৈরির জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পাশাপাশি অগমেন্টেড রিয়েলিটিও অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। এর ব্যাখ্যায় ফেইসবুক প্রধান বলেন, ভবিষ্যতে ফেইসবুক একটি শেয়ার্ড প্রাণবন্ত প্ল্যাটফর্মে রূপ নেবে যা ব্যবহারকারীকে ভিআর ও এআর ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক অভিজ্ঞতার মধ্যে নিজেকে ‘টেলিপোর্ট’ করতে দেবে।
জাকারবার্গ মেটাভার্স ধারণাটি সম্প্রতি সামনে নিয়ে এলেও, এ ধারণার উদ্ভব আরও আগেই হয়েছে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এটি পরিচিত। এ ধারণাটিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে ফোর্টনাইট ও রোব্লক্সের মতো গেইম নির্মতা প্ল্যাটফর্মগুলো। এ সপ্তাহের শুরুতে মাইক্রোসফট প্রধান সাত্যিয়া নাদেলাও “প্রাতিষ্ঠানিক মেটাভার্স” এর কথা বলেছেন নিজেদের আয় হিসাব বৈঠকে।
ফেইসবুক নিজেদের শেয়ারড মহাবিশ্ব তৈরিতে শত শত কোটি ডলার খরচ করছে। জাকারবার্গ জানিয়েছেন, এই মহাবিশ্বে অংশ নেবেন ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা এবং দেখা যাবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন। তবে, এটি বাস্তব রূপ নিতে হলে মানুষকে ফেইসবুকের কম্পিউটিং হার্ডওয়্যার কেনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এনগ্যাজেট উল্লেখ করেছে, ফেইসবুকের পরিকল্পনা হল ডিভাইসগুলোকে আরও সাশ্রয়ী করে তোলা।
“বড় প্রিমিয়ামে ডিভাইস বিক্রি বা এরকম কোনো কিছু প্রাথমিকভাবে আমাদের ব্যবসা মডেল হবে না, কারণ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি মানুষকে সম্ভব সেবা দেওয়া।” – উল্লেখ করেছেন জাকারবার্গ।
তিনি আরও বলেন, “তাই আমরা যা-ই করব সেগুলোকে যতোটা সম্ভব সাশ্রয়ী করে তুলবো, যাতে যতো মানুষ সম্ভব এতে যোগ দিতে পারবে এবং এরপর এর ভেতরের ডিজিটাল অর্থনীতি আঙ্গিনা গড়ে তোলা হবে।”
খবর রটেছে, শুধু সানগ্লাস-ই নয়, বিল্ট-ইন সেলুলার সংযোগ ও ডিসপ্লে খুলে নেওয়া যাবে এমন স্মার্টওয়াচও তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, স্মার্টওয়াচ আগে আসবে বাজারে। কিন্তু জাকারবার্গের পরিকল্পনা যে ভিন্ন সে প্রমাণ মিলেছে আয় হিসাব বৈঠকেই।