জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু, বিশ্ব শান্তি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা

image-599106-1664051745

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের
সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ভাষণ দেন এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে শান্তি ও
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ওপর জোরারোপ করেন। বহুপাক্ষিকতার ওপর জোর
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংকট ও বিরোধ নিরসনে
সংলাপের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে অস্ত্র প্রতিযোগিতা,
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ,
স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি
প্রতিষ্ঠা করুন। জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে প্রদত্ত
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা,
পালটা-নিষেধাজ্ঞার মত বৈরীপন্থা কখনও কোন জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। তিনি
বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে আমরা শান্তি
বজায় রাখতে পারি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে যেন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত
হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক যিনি সারা বিশ্বে শান্তি ও
স্থিতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছেন- বিশ্ব শান্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের
অন্যতম মূলনীতি। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত বিশ্বের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি
মোটেই কুন্ঠিত ছিলেন না, সে সংগ্রাম হোক আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা কিংবা
এশিয়ার যে কোনো প্রান্ত। অস্ত্র দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম বন্ধ করা যায় না এ কথা
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শান্তির প্রতি জোর
দেওয়া, যে কোনো ধরনের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে
সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি
ভারসাম্যপূর্ণ নীতি।

বঙ্গবন্ধু কখনো কখনো সে ভারসাম্য রক্ষা করতে পেরেছিলেন কিনা তা ইতিহাসের
বিচার্য বিষয় হয়ে রয়েছে শোষিত, নিপীড়িত, ও মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই নির্ভয় ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তার কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছিল-

" পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত; অত্যাচারী এবং নিপীড়িত। আমি নির্যাতিতদের পক্ষে। "

বিশ্ব শান্তির অগ্ৰদূত বঙ্গবন্ধু শান্তি, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই
করেছেন।

“শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্বনেতা”  " জুলিও কুরি
শান্তি পদক " পাওয়ার পর সেক্রেটারি রোমেশ চন্দ্র এ মন্তব্য করেছিলেন।

আমি শেখ মুজিবের মেয়ে এটা মনে রাখবেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করবও
না ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের
কারিগর এবং উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। তিনি বাঙালি জাতিকে নতুন এক আশা
দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে
গেছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে সর্বপ্রথম
বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনিই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি জাতিসংঘে ১৯
বার বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা
শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে এবং যুক্তরাষ্ট্র সময়
বৃহস্পতিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র
শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে এসব কথা বলেন বলে
বাসস (২৩ সেপ্টেম্বর) জানায়।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তার ভাষণে বিশ্ব পরিস্থিতিকে তোলে ধরে বলেন,  আমরা
ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে
একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া
হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-
জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান,
চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের
ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায় ।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব; যেখানে থাকবে বর্ধিত
সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি
মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে
যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভাষণ
দিলেন তা বঙ্গবন্ধু, বিশ্ব শান্তি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ।

Pin It