জামায়াতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তা যেন আওয়ামী লীগের ওপর করা না হয়’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে জামায়াত ছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও গণঅভু্যত্থানে নিহত-আহতদের স্বজনরা অংশ নেন।
শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টের শহিদদের স্বপ্নের দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতিকে জানাতে হবে। শহিদ পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী দলগুলোকে এসব পরিবারের পাশে দঁাড়ানোর আহ্বানও জানান তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বলেছিল ক্ষমতা ছাড়ার পর ৫ লাখ আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হবে। অভু্যত্থানের পর ৫০০ কিংবা ৫ জনকে হত্যা করা হয়নি। তারা দুর্নীতি করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীতে সব দেশেই বাংলাদেশিরা আছেন। যেখানেই যান আপনাদের (আ.লীগ নেতা) ধরে ফেরত পাঠাবে তারা। যেখানেই যাবেন সেখানেই ধরা হবে।
জামায়াতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ঐতিহ্যবাহী দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য হলো দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা, হত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ভোট চুরি। তারা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না বরং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনকে অবিলম্বে নিষদ্ধি করতে হবে।
সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের বিপ্লবের শহিদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাসি্ত দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও অসংখ্য আলেম-উলামাদের হত্যা এবং আয়নাঘরের মাধ্যমে জাতীয় নেতাদের নির্যাতন চালিয়েছে।
শহীদ ফারহানুল ইসলামের বাবা বলেন, ফারহান ফাইয়াজ আমার একমাত্র ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি∏যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তাদের দ্রুত বাংলার মাটিতে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এসএম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় গণতানি্ত্রক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদ একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রমুখ।
লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা আজ : এদিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে আজ সকালে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।