সারা দেশের রাজনীতিতে যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরোধিতা করছে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিরল ঐক্য গঠন করে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ (একাংশ), বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’।
বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০১৯ কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে সকাল নয়টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম আবুল কালাম।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম এবং বামপন্থী একজন শিক্ষককে নিয়ে গঠিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ ১৫টি পদের ১০টিতে জয় পায়। শিক্ষকদের এই জোট উপাচার্যবিরোধী হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে সহসভাপতি ও চারটি সদস্যপদ পেয়েছে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের অন্য অংশের প্যানেল বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ। শিক্ষকদের এই অংশ উপাচার্য ফারজানা ইসলাম সমর্থিত।
যাঁরা জিতলেন
নির্বাচনে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ থেকে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার (আ.লীগ)। সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা (বিএনপি)। যুগ্ম সম্পাদক পদে সহযোগী অধ্যাপক লাইজু নাসরীন (আ.লীগ), কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন (বিএনপি)।
এই জোট থেকে সদস্য পদে অধ্যাপক মাহবুব কবির (বিএনপি), অধ্যাপক শামসুল আলম (বিএনপি), অধ্যাপক ফরিদ আহমদ (আ.লীগ), অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন (আ.লীগ), অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান (আ.লীগ), অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস (বামপন্থী) নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে ‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সহসভাপতি পদে অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাশ জয়লাভ করেছেন। এই প্যানেল থেকে সদস্য পদে অধ্যাপক এ এ মামুন, অধ্যাপক রাশেদা আখতার, সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা ও সহকারী অধ্যাপক মাহফুজা খাতুন জয়লাভ করেছেন।শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন কোনো সংকট তৈরি হয় তখন দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে শিক্ষকেরা এমন মোর্চা গঠন করেন। শিক্ষকদের লক্ষ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করা। শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি সে লক্ষ্যেই কাজ করবে।
সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা বিএনপির আদর্শিক বিষয়টির চেয়ে আমাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে। অন্য সব আদর্শের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে আমরা এই জোট গঠন করেছি। আমরা জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে দাবি তুলেছি। সে লক্ষ্যে কাজ করব।’
বামপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্দেশ্যে সম্মিলিত জোট গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের মন্দ কাজের প্রতিবাদ ও গঠনমূলক সমালোচনা করাই হবে শিক্ষক সমিতির মূল কাজ।
‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ভাষ্য, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ১৯৭৩–এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়ম ভেঙে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর বিরোধিতা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেন এমন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলাম দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাওয়ায় কার্যত দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের শিক্ষকেরা। পরে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা ‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠন গঠন করেন। তবে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের ভাষ্য, ফারজানা ইসলাম রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে আসীন হন—সেখানে ৭৩–এর অধ্যাদেশের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।