জিনের ভয় দেখিয়ে টানা ১৫ দিন ৯ বছরের এক শিশুকে বলাৎকার করে আসছিল শাহাদাৎ হোসেন (২৪) নামের মসজিদের সহকারী এক মোয়াজ্জিন। শিশুটি এমন অভিযোগ করলে আর পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানান স্থানীয় কাউন্সিলর, আওয়ামী ও যুবলীগ নেতাদের। পরে তাদের গরিমসিতে নির্যাতনের শিকার শিশুর বাবাকে থানায় না যেতে উদ্বুদ্ধ করে তারা।
গ্রাম্য শালিসি বিচারে অপরাধী শাহাদাতকে মাটিতে থুথু ফেলে মুখ দিয়ে চেটে তোলা এবং ২০ বার কান ধরে উঠবস করার পর গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার রায় দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড তুমলিয়া গ্রামে।
অভিযুক্ত শাহাদাত উপজেলার তুমলিয়া গ্রামের মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে। সে পাশের গ্রাম দুবার্টি আলীয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী ও তুমলিয়া জামে মসজিদের সহকারী মোয়াজ্জিনের কাজ করে। আর নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটি স্থানীয় একটি মাদরাসায় ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত।
সোমবার (০৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান নির্যাতনের শিকার ওই শিশুর পিতা। তিনি জানান, শাহাদাত আরবি পড়তে জানতো, তাই তাকে বলেছিলাম আমার বাড়িতে এসে আরবি পড়ানোর জন্য। তবে সে বাড়িতে এসে পড়াতে পারবে না বলে জানায় এবং তার বাড়িতে সন্ধ্যার পর পাঠাতে বলে। কথা মতো তার ছেলেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পাঠানো হতো শাহাদাতের বাড়িতে। তার ছেলেসহ আরো ১০/১৫ জন আরবি পড়তো শাহাদাতের কাছে। শাহাদাতের বাড়ির পাশে তার চাচার বাসার ২য় তলায় সবাইকে আরবি পড়াতো। গত ১ সপ্তাহ আগে তার ছেলে আরবি পড়তে যেতে অনিহা প্রকাশ করে এবং বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। ওইদিন পড়তে যেতে দেরি হওয়ায় বাড়িতে এসে খোঁজ নেয় শাহাদাত। পরে তার সাথে পাঠানো চেষ্টা করলে ছেলে কান্নাকাটি করে। এ সময় পরিবারের কাছে মূল ঘটনা খুলে বলে।
ছেলের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা বাজলে অন্য ছেলেদের ছুটি দিয়ে দিতো লম্পট শাহাদাত। পরে দু’তলার ওই রুমটি আটকে দিতো এবং জিনের ভয় দেখিয়ে তার ছেলেকে বলৎকার করতো। এ ঘটনা কাউকে বললে তার সাথে থাকা জিন শিশুটির ক্ষতি করবে বলেও ভয় দেখাতো শাহাদাত।
তিনি আরো জানান, বিষয়টি কালীগঞ্জ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহিম মোল্লা ওরফে চান্দু মোল্লা এবং ওই ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর আফছার আহমেদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়। তারা ১০/১৫ দিন আগে শালিস বসিয়ে শাহাদাতকে মারধর করে। বিচারে তিনি সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি গাজীপুর এসপি’র কাছে যাওয়ার ভয় দেখান। পরে রোববার (০৪ এপ্রিল) দুপুরের দিকে আবার শালিস বসায়। এতে শাহাদাতকে বিচারকরা মাটিতে থুথু ফেলে চেটে তুলতে বলে ও ২০ বার কান ধরে উঠবস করায় এবং তাকে গ্রাম ছাড়া হতে বলে। তবে তিনি ওই কাউন্সিলরদের কথায় এবং নিজের সম্মানহানীর চিন্তা করে থানা পুলিশে যাননি বলেও জানান নির্যাতনের শিকার ওই শিশুর বাবা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহিম মোল্লা ওরফে চান্দু মোল্লা জানান, এর আগেও ওই শাহাদাত জিনের ভয় দেখিয়ে পানি পড়া দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আবার এ ঘটনা করলো। টাকা-পয়সা খরচ হবে বলে তাদেরকে থানা-পুলিশ যেতে নিরুৎসাহীত করেছি। তাছাড়া আমার বয়স হয়েছে তাই নতুন কাউন্সিলর দায়িত্ব নিয়েছে বিচার করার তাই আমি আর কিছু বলিনি।
নব নির্বাচিত কাউন্সিলর আফছার আহমেদ জানান, আসলে বিষয়টি বড় করে দেখলে অনেক কিছু। আমরা গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে তার বিচার করে দিয়েছি। একবার বিচার করার পর নির্যাতনের শিকার পরিবার সন্তুষ্ট না হওয়ায় দু’তরফা বিচার করেছি। তাছাড়া নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা থানা-পুলিশ না করে আমাকে বিচার করে দিতে বলেছিল। আর শালিসের সময় শুধু আমি না কাউন্সিলর চান্দু মোল্লা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতৃবৃন্দও ছিল। তবে এই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করতেও প্রতিবেদককে তিনি অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যতদূর জানি বিষয়টি নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। তবে অভিযোগ দিলে বিষয়টির ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা