জিয়াকে খাটো করার অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু হয়েছে: ফখরুল

fakhrul-180820-01

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘ইতিহাস বিকৃত’ করে অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমানকে জড়িত করে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, “মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুণঃপ্রতিষ্ঠাকারী ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে।

“সরকার প্রধান কর্তৃক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হল।”

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গত রোববার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির জনকসহ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হত্যায় খন্দকার মোশতাকের সহযোগী হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণ জড়িত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের রক্ষায় ইমডেমনিটি আইন করা এবং খুনিদের পুনর্বাসনে জিয়া ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথাও বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “জিয়াউর রহমানকে ১৫ অগাস্ট হত্যা মামলার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে সেটা ইতিমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।

“ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না। এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।”

‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভিডিও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক’

মির্জা ফখরুল বলেন, “১৫ অগাস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে (আব্দুল মাজেদ) দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারের ‍মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ অগাস্ট হত্যার সকল আসামিদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্য্কর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে।”

“এমতাবস্থায় আইনিভাবে এই ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নাই। এই পদক্ষেপ বরঞ্চ সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইনবিরোধী এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।”

“অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকার প্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নহে। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ-৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা হয়েছিল, তারা সকলেই আওয়ামী লীগের নেতা বলে দাবি করেন ফখরুল।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “১৯৭২-৭৫ সালে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধই শুধু করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছে সিরাজ শিকদারসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে, যার মাধ্যমে এদেশে শুরু হয়েছিল বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ধারা। জাসদ গণবাহিনীর হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেসময়ে শিকার হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের। জন্ম হয়েছিল বিরোধী মতকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি। আজও ১৯৭২-৭৫ সালের সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি চলছে।”

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

Pin It