করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ‘বাস্তবতা বিবেচনা’ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে মানুষের জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিানার নির্দেশনায় সাধারণ ছুটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“যারা মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত ভুল, তাদেরকে বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে দেখে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
বুধবার ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালত এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়। ফলে বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে।
সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হলেও সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালু করার পাশাপাশি ঈদ সামনে রেখে বিপণি বিতান ও দোকান-পাট খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মসজিদেও আবার বাইরে থেকে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারঘোষিত ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ না হলেও রাস্তায় এখন যেভাবে ভিড় বাড়ছে, তাতে সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। সরকারের মার্কেট ও কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে সমালোচনাও করছেন।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল করার উদাহরণ টানেন।
“বৈশ্বিক এই মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে মৃতের সংখ্যা যেখানে ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজার, ফ্রান্স ইতালিসহ কিছু দেশে ২৫ থেকে ৩০ হাজারে পৌছেছে, সেসব দেশে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে।”
করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময়ে ডেঙ্গু যেন না বাড়তে পারে, সে বিষয়ে দেশের সব সিটি করপোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “এ সময়ে মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে বলে গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। এইডিস মশা থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
“ঘর-বাড়ির চারপাশে যাতে পানি না জমে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি সারা দেশে সিটি করেপারেশনকে মশক নিধনে কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দেশের যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই সবার আগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় মন্তব্য করে কাদের বলেন, “মানুষের পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। দলের সভানেত্রীর নির্দেশে নেতাকর্মীরা সারা দেশে অসহায় মানুষের কাছে দুর্যোগে আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ত্রাণ সহায়তা, খাদ্য ও নগদ সহায়তা, ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, টেলি মেডিসিন, লকড ডাউন এলাকায় রাতে খাবার বিতরণ, ইফতার বিতরণ, সেহেরি বিতরণ, সবজি বিতরণসহ কৃষকদের ধান কেটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘরে পৌছে দিয়েছেন।
সঙ্কটের এই সময়ে দেশের ৪ কোটি মানুষকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরও ১ কেটি ২০ লাখ পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছে বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “এই ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ঈদের আগে ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ প্রদান করা হবে, যা আগামীকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে পারেন।”
ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, “এই সময়ে একটি অশুভ মহল ত্রাণ বিতরণ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসী ও জনগণের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”