নাটোর, জয়পুরহাট ও যশোর জেলায় সরকারি চাল লোপাট করতে গিয়ে কয়েকজন ধরা পড়েছেন, যাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও রয়েছেন।
মঙ্গলবার এ তিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এছাড়া গাইবান্ধাতেও সরকারের ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির চাল উদ্ধার হয়েছে।
এছাড়া বগুড়ায় হত দরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওয়াজেদ হোসেন ও কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হকের বিরুদ্ধে।
তিন জেলায় আটক যারা
নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন শাহ্, চাল ব্যবসায়ী গোলাম মওলা ও চালের ডিলার লেবু হোসেন।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সাইদুর ও তার শ্যালক আনোয়ার হোসেন।
যশোরের শহরতলীর শানতলা থেকে রাকিব হাসান শাওন বাঘারপাড়া উপজেলার প্রেমচারা গ্রামের বাসিন্দা ও হাসিবুল হাসান যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুরের বাসিন্দা। অন্য সংশ্লিষ্টদের ‘নাম বের করা যায়নি।’
নাটোর
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ত্রাণের ১৩ বস্তা চালসহ ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন শাহ্সহ তিনজনকে আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন বানু জানান, মঙ্গলবার দুপুরে চাল ব্যবসায়ী গোলাম মওলা ত্রাণের চাল কিনে নিয়ে যাওয়ার পথে বোয়ালিয়া এলাকায় আট বস্তা চালসহ স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন। পরে তারা প্রশাসনকে ঘটনাটি জানান।
“এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলমের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালিয়ে বোয়ালিয়া ক্লাব থেকে আরো পাঁচ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।
“চাল ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যমতে ইউপি সদস্য শাহিন শাহ্ ও ডিলার লেবু হোসেনকেও আটক করা হয়। এ সময় সর্বমোট ১৩ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।”
পরে আটক সবাইকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আনার পর তাদের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আক্তার জানান, চাল চুরির অভিযোগে মামলা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের বুধবার আদালতে হাজির করা হবে।
জয়পুরহাট
জয়পুরহাটে অবৈধভাবে বিক্রি ও সরবরাহের অভিযোগে সাত বস্তা ওএমএস-এর চালসহ আওয়মী লীগ নেতা ও তার শ্যালককে হাতেনাতে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার বিকালে আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর বাজার থেকে মঙ্গলবার বিকালে আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর বাজার থেকে গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সাইদুর ও তার শ্যালক আনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়।
জয়পুরহাট র্যাব-৫ ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ জানান, আটককৃতরা সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) চাল অবৈধভাবে বিক্রি ও সরবরাহ করার সময় র্যাব সদস্যরা তাদের হাতেনাতে আটক করেন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ‘সাত বস্তা ওএমএস-এর চাল উদ্ধার করা হয়।’
“তাৎক্ষণিকভাবে ওএমএস-এর চাল অবৈধভাবে বিক্রির কথা র্যাবের কাছে স্বীকারও করেন তারা।”
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আক্কেলপুর থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যশোর
যশোর শহরতলীর শানতলায় এক গুদামে মঙ্গলবার বিকালে অভিযান চালিয়ে সরকারি ৮০ বস্তা চাল জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, তারা গোপন সূত্রে খবর পান-শানতলায় সরকারি চাল মজুদ করে রাখা হয়েছে।
“এ খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় গুদামে তল্লাশি চালিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর লেখা ৮০টি বস্তা ভরা চাল জব্দ করা হয়।”
প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে এসব বস্তায় মোট চার হাজার কেজি রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে তারা রাকিব হাসান শাওন ও হাসিবুল হাসান নামে দুই যুবককে আটক করেছেন।
আটক রাকিব হাসান শাওন বাঘারপাড়া উপজেলার প্রেমচারা গ্রামের বাসিন্দা ও হাসিবুল হাসান যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুরের বাসিন্দা।
“জব্দকৃত চালের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
“তবে এ চাল কোথায় পেয়েছেন এবং এর সাথে আর কারা সম্পৃক্ত তা জানার জন্য আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
যদি আরও কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদেরও বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বগুড়া
বগুড়ায় গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই সভাপতির বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজির হত দরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হত দরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০০ বস্তা চাল ভুয়া মাস্টাররোল তৈরি করে আত্মসাৎ করেছেন মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ডিলার মো. ওয়াজেদ হোসেন।
তিনি আরো জানান, ‘অনেক মৃত ব্যক্তির নামেও মাস্টারোল’ তৈরি করেছিলেন ওই নেতা।
এছাড়াও যাদের নামে ‘মাস্টাররোল’ তৈরি করা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন ডিলারের কাছে থেকে চাল এখনও উত্তোলন করেননি তারা বলে জানান তিনি।
তবে ডিলার ওয়াজেদ হোসেনের দাবি-এটা ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
“সঠিক মাস্টাররোল করে চাউল বিতরণ করেছি।”
তবে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান জানান, দেরিতে চাল বের করার জন্য ডিলার ওয়াজেদ হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়াও ‘তার মাস্টাররোল সঠিক রয়েছে কিনা’ তা পরীক্ষা করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই ‘ডিলারের গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।’ তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ডিলারের গুদাম সিলগালা থাকবে।
“কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।”
অন্যদিকে, সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া জানান, গত সোমবার সারিয়াকান্দির কুতুবপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি দরের হত দরিদ্রদের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আট টন চাল বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রির অপরাধে গাজিউল হক নামের এক ডিলারকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“ওই চাল অন্য ডিলারের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
ডিলার গাজিউল হক কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান।
এছাড়া মঙ্গলবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দশ টাকা কেজি দরের ২০ বস্তা চাল পাচারের সময় উদ্ধার করেছে পুলিশ।