করোনাভাইরাসের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতি যে সংকটে পড়েছে তা থেকে উত্তরণে একগুচ্ছ আর্থিক ও নীতি সহায়তার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের ১১টি সংগঠন। সংগঠনগুলো সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে অর্থনীতিতে টাকার সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে। পাশাপাশি ক্ষতিতে পড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান, সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা চেয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো এ দাবি জানায়। ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন এমসিসিআই, তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, জুট মিলস্ অ্যাসোসিয়েশন, জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বেসিস, হিমায়িত পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএ, বিইএফ, এলএফএমইএবি এবং এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে এই বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। মেট্রপলিট্যান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স্ ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি কামরান টি রহমান এতে স্বাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিশ্ব অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে এবং শীঘ্রই উত্তরণ ঘটবে না। শুধু অভ্যন্তরীণ কারণেই নয়, বৈশ্বিক কারণেও বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান ব্যবসায়ী অংশীদার দেশগুলো চীন, ইতালি, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া এই ভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে ধারণা করছে, এই সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কম হতে পারে। এতে বৈশ্বিক চাহিদা ও কাঁচামাল সরবরাহে ধীরগতি দেখা দেবে।
অন্যদিকে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে ক্রয়াদেশ কমেছে। কেবল তৈরি পোশাক খাতেই গত দুই সপ্তাহে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের আদেশ বাতিল করা হয়েছে। দেশীয় বাজারেও খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যতীত অন্যান্য জিনিসের চাহিদা কমে যাবে। এই সংকটের প্রভাব কমিয়ে আনতে অর্থনীতিতে জরুরি ভিত্তিতে টাকার সরবরাহ বাড়ানো দরকার। এছাড়া পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরও সামনেই, যে সময়ে বাস্তবিক কারণেই ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রবাহ বিশেষভাবে জরুরি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে।
মার্চ মাস থেকে পরবর্তী তিন মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি টাকা দরকার। দেশের সেবা ও শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ভিত্তিতে এই হিসাব করেছে সংগঠনগুলো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ১৬ হাজার থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো দরকার। যাতে সব ধরনের ব্যবসায়ী বিনা সুদে ঋণের সুযোগ পায় এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে পরিশোধ করতে হবে।
সংকটের সময়ে অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট স্থগিত রাখতে হবে। গত ৬ মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা স্থগিত রাখা এবং ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ স্থগিত করার সুপারিশ করেছেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ৩০ জুন কোনো ঋণকে খেলাপি না করার যে নির্দেশনা ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে তা আরও ছয় মাস বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা এবং রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনের সময় যা বাড়ানো হয়েছে তার সাথে আরও ৬০ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। নীতি সুদহার আরও কমাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক উন্নয়ন সহযোগিতাদের সহায়তা নিয়ে এক লাখ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে পারে, যা এসএমই খাতে স্বল্প সুদে বিতরণ করা হবে। যারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে না তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে হবে।
সংগঠনগুলো আরও বলেছে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী সমাজ সমর্থন জানাবে। সেটা হতে পারে ১৪ দিনের জন্য সম্পূর্নরূপে লকডাউন। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের শ্রমিক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি কাজ না থাকলে শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে কারখানা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখবে। মালিকরা বন্ধের সময়ের পূর্ণাঙ্গ বেতন পরিশোধ করবে। সেবাখাতসহ যেখানেই সম্ভব কর্মীদের বাসা থেকে কাজের অনুমতি দেওয়া ও কমসংখ্যক কর্মীকে অফিসে উপস্থিত হতে অনুমতি দেওয়া হবে।
সংগঠনগুলো বলেছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতা ও পরিমাণ বাড়াতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে হবে। চা শিল্পের শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।