টোকিওতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সেই উপহার

Untitled-6-5ccb464487bfd

জাপানের এক সাংসদকে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি উপহার নজর কাড়ছে টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আসা দর্শনার্থীদের। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওই মুখাবয়বটি দূতাবাসে সযত্নে রক্ষিত আছে। জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি জাপানের প্রয়াত সাংসদ তাকাসি হাওয়াকাওয়াকে দেওয়া দুর্লভ এ মুখাবয়ব এখন ইতিহাসের সাক্ষী। মুগ্ধ হয়ে সেটি দেখছেন জাপানিরা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রয়াত এই সাংসদের ছিল অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা। তাদের দু’জনের মধ্যে অনেক মিল ছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও জাপান সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষ নিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন হাওয়াকাওয়া।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি গঠন হলে হাওয়াকাওয়া এর সভাপতি হন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। তাকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এরপর থেকে দু’দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে জাপানের সংসদে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলতেন। বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা দেওয়ার জন্যও তৎপর থাকতেন তিনি। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন হাওয়াকাওয়া।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গেলে তার বন্ধুকে একটা উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি টোকিওতে হাওয়াকাওয়ার বাসভবনে ছুটে যান। উপহার হিসেবে নিয়ে যান রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একটি মুখাবয়ব। বঙ্গবন্ধু জাপানে অবস্থানকালে হাওয়াকাওয়ার সঙ্গে দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের বিনিয়োগে তার এবং জাপান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পরও তার দেওয়া উপহার সযত্নে নিজের কাছে রাখেন হাওয়াকাওয়া। ১৯৮২ সালের ৭ ডিসেম্বর হাওয়াকাওয়া প্রয়াতহন। এরপর মুখাবয়বটি সংরক্ষণ করেন তার ছেলে ওসামু হাওয়াকাওয়া। বঙ্গবন্ধু যখন টোকিওতে তাদের বাসভবনে গিয়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন কিশোর। কাছ থেকেই ওসামু দেখেছেন তার বাবার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর গভীর বন্ধুত্ব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে হাওয়াকাওয়ার সুসম্পর্কের কথাও জানতেন তার ছেলে।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জাপান সফরে আসেন তখন এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকেও অবগত হন ওসামু। সে সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে টোকিওতে দূতাবাসের নিজস্ব ভবন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। গত বছর নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাবয়বটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার কাছে হস্তান্তর করেন ওসামু। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দুর্লভ সেই মুখাবয়বটি প্রথমে বাংলাদেশের জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সেটি টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনে স্মৃতি হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সুসজ্জিত এই ভবনেই এখন মুখাবয়বটি শোভা পাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সমকালকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে জাপানিদের কাছে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মুখাবয়বটি দূতাবাসে সযত্বে রাখা হয়েছে। জাপানিরা যখন দূতাবাসে আসেন, তখন তারা আগ্রহ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া এই উপহারটি দেখেন। অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে তথ্য জানতে চান।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের ওপর একটি বিশেষ সংকলন প্রকাশ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিষয়টি তদারক করছেন। ওই সংকলনে হাওয়াকাওয়াকে দেওয়া এই মুখাবয়বটি সম্পর্কে তুলে ধরা হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু দুর্লভ ছবিও থাকবে। জাপানি ও ইংরেজি ভাষায় সংকলনটি প্রকাশিত হবে।

Pin It