টানা তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের স্বপ্ন ডানা মেলেছে অবশেষে। ৩৮ হাজার ছাত্রছাত্রী এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় তাদের অংশীদারিত্বের স্বপ্নপূরণের আগমুহূর্তে দাঁড়িয়ে। আদালতের নির্দেশে নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নানা প্রক্রিয়া শেষ করার পর গতকাল সোমবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।
ঘোষিত এ তফসিলের মধ্য দিয়ে ২৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন তারা। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ বডি সিনেটে স্থান পাবেন ডাকসুর ৫ ছাত্র প্রতিনিধি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া সব ছাত্রছাত্রীরই স্বপ্ন ডাকসুতে ভোট দেওয়ার কিংবা নেতৃত্ব দেওয়ার। এই সাধ দুই যুগের বেশি সময় ধরে তাদের পূরণ হয়নি কিছুতেই। হাতের নাগালে এখন সেই স্বপ্ন। তফসিল ঘোষণার পর উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচনে ভোট দিতে চান তারা।
ডাকসুকে বলা হয় দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট। ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ‘সূতিকাগার’ হিসেবে এক সময় ভাবা হতো ডাকসুকে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে ডাকসু। ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন ছিল এটি। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনে বিগত ২৮ বছর ৬ মাস ধরে ডাকসুর কোনো কার্যক্রম নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে গত ৪৭ বছরে এ নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ডাকসুর ওই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয় ১৯৯৮ সালে। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর কেটে গেছে ২৮ বছর। ডাকসু এক সময় ছিল ছাত্র নেতৃত্বের প্রধান কেন্দ্র। ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠিত হতো প্রতিটি ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদের আস্থা অর্জনে উন্মুখ থাকতেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। ছিল হলভিত্তিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ছাত্র রাজনীতিতে অছাত্রদের আধিপত্য বিস্তার করছে, নেই সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্ব। ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর এই অচলায়তন ভেঙে এখন আলোর পথে এগোচ্ছে দেশের ছাত্র রাজনীতিও।
১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে ডাকসু প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়। ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, সংক্ষেপে ডাকসু।
বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া : ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি গতকাল সমকালকে বলেন, ‘এটি একটি ভালো লক্ষণ। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এটি ঢাবি কর্তৃপক্ষের একটি শুভ উদ্যোগ। এর মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত। এভাবে যদি এগিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আমাদের দেশে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।’
ডাকসুর অপর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটা সত্যিই আশাপ্রদ বিষয়। আশা করব অত্যন্ত সুচারুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।’
স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর প্রথম ভিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন হতেই হবে। ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ হবে এতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-জনতার দীর্ঘদিনের দাবি মেনে অপরাধ মোচনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্রদের বহুদিনের যে দাবি, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্তত ঘোষণা এলো। কিন্তু এই নির্বাচন যেন দখলদারিত্বের অভিযানে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা হলগুলো দখলে রেখে যে দুর্গ বানিয়েছে, তা যেন কাজে লাগাতে না পারে। আবাসিক দখলদারদের খবরদারিমুক্ত নির্বাচন যেন হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এমপি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যাবাদ জানাই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ছাত্রসমাজের অতীত ঐতিহ্যকে আবারও সামনে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবার অংশগ্রহণে ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমেই এটা সম্ভব হবে।
ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘এত বছর পরে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা অবশ্যই খুশির খবর। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান না থাকায় এতদিন নির্বাচন না হওয়ায় দেশের রাজনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নতুন নেতৃত্ব বিকশিত হয়নি।’
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত জিএস হিসেবে তার প্রত্যাশা- সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সেখানে সবার সহাবস্থান না থাকলে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র ক্ষমতা অব্যাহত থাকলে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘তফসিল অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয় সেজন্য প্রশাসন সঠিকভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এখন আরও বেশি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি। এক্ষেত্রে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। এরপর নিয়মিত ছাত্রদের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ডাকসু সচল হবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।’ হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনের আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সব সংগঠনের সঙ্গে বসে প্রশাসনকে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’
ঘোষিত তফসিলকে ছাত্রনেতারা যে চোখে দেখছেন : ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ, প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলো তুলেছে আপত্তি।
গতকাল সোমবার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এবার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে ভোটগ্রহণ কোথায় হবে, তা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। আগের মতো হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ স্বাগত জানালেও ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি তোলে। তবে কর্তৃপক্ষ আগের মতো হলেই ভোটকেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘোষিত তফসিলে বলা হয়েছে, আগামী ১১ মার্চ হলগুলোতে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা।
ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগ। তফসিল ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘তফসিলকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় আমরা আনন্দিত। আমরা চাই, সঠিক সময়ে নির্বাচন হোক। নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।’
এ সময় ছাত্রদলের নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কায় ছাত্রদল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানাচ্ছে। কেননা, তারা অছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করে। নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার মতো তাদের তেমন কেউ নেই। এখন যদি তারা নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায় তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে।’
অপরদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘এ তফসিলে ছাত্রদল হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তফসিলের সিদ্ধান্তগুলো একপাক্ষিক ও অগণতান্ত্রিক। কেননা, হলে ভোটকেন্দ্র না করার জন্য ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৪টি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে প্রায় ১২টি সংগঠনেরই দাবি ছিল। প্রথমত, সেই দাবিই উপেক্ষিত হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে সহাবস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কিছুই করতে পারেনি। এজন্য আমরা মনে করি, ঘোষিত এ তফসিল অগণতান্ত্রিক। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে এই তফসিলে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সর্বশেষ যে সাত দফা দাবি ছিল- নির্বাচন কমপক্ষে তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া, বয়সের পরিসীমা উঠিয়ে দেওয়া, ডাকসুতে কারা প্রার্থী হতে পারবেন, এমন বিষয়সহ আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি ছিল। এ দাবিগুলোকে সম্পূর্ণই উপেক্ষা করা হয়েছে। এজন্যই আমরা মনে করি, নির্দিষ্ট একটি ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এ তফসিল।’ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে পুনঃতফসিলের দাবি জানানো হয়েছে বলেও এই নেতা জানান।
ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস বলেন, ‘ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যে সকল দাবি উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো মেনে না নিয়ে প্রশাসন তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে আমরা খুব বেশি আশ্বস্ত হতে পারিনি। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। এর পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি আমরা। শেষ পর্যন্ত যদি প্রশাসন আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নেয় এবং এই একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই থাকে, তাহলে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে আবার ভাবব আমরা।’
ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল- ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করা। সেই দাবি মানা হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষুব্ধ। এর প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘সকল ছাত্র সংগঠনের যে দাবি ছিল, প্রশাসন এখনও তা মেনে নেয়নি। এতগুলো সংগঠনের দাবি মেনে না নিয়ে যে তফসিল ঘোষণা করা হলো, এর মাধ্যমে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। আমরা তড়িঘড়ি করে কোনো নির্বাচন চাই না। আমরা চাই, নির্বাচনের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা করা হোক।’ এ সময় নির্বাচনী প্রচারণার যথেষ্ট সুযোগ রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে প্রচারণার সময়সীমা খুবই কম। ক্যাম্পাসে প্রচারণার জন্য মাত্র ছয় দিন সময় পাব আমরা। শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সময় রাখা দরকার।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রচারণার জন্যে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় রাখার দাবি জানান তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে’র আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনের দাবি ছিল- ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করা। এ দাবি আমলে না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে আমাদের আপত্তি আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে এ তফসিলকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা কিংবা জানাচ্ছি না, এরকম বক্তব্য এখনই দেব না। নিজেরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব আমরা। পরে সে সিদ্ধান্ত সবাইকে জানাব।’
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ :ডাকসু নির্বাচনের তফসিলে হলে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র রাখার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে তারা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে তারা এই তফসিলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তারা অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপন করার দাবি জানান।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মিছিল : এদিকে ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধির অগণতান্ত্রিক সংশোধনী বাতিল, একাডেমিক সেন্টারে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে গতকাল মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটিও। মিছিল শেষে ডাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘১২টি ছাত্র সংগঠন প্রস্তাব করেছিল আবাসিক হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য। কিন্তু এসব সংগঠনের দাবি না মেনে ছাত্রলীগের কথামতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলেই ভোটকেন্দ্র বহাল রেখেছে। এতে প্রমাণিত হয়, তারা গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের মতো ডাকসু নির্বাচন করতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষিত তফসিলে ৩ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। আর প্রচারণার শেষ দিন ৯ মার্চ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তাহলে প্রচারণার জন্য মাত্র ছয় দিন রাখা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রশাসন সবাইকে প্রচারণার পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি একটি নির্বাচন করতে চায়। এর মাধ্যমে ডাকসুও একটি ছাত্রনিপীড়কের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।’