স্থূলতা, অতিরিক্ত ওজন এবং অলস জীবনযাপন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ হিসেবে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর এই রোগের কারণে কিডনি বা বৃক্ক নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হৃদ-সংক্রান্ত নানান রোগ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
কথা হচ্ছে, এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া কি সম্ভব?
উত্তরে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন চিকিৎসক এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি’র সাথে যুক্ত সহযোগী অধ্যাপক ডা. লিয়েনা ওয়েন বলেন, “ডায়াবেটকদের হৃদসংক্রান্ত রোগে ভোগার সম্ভাবনা অন্যান্যদের তুলনায় দুতিন গুণ। আর এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার আগে এর ধরন সম্পর্কে জানা দরকার।”
টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়- দেহের ‘অটোইমিউন’ প্রক্রিয়া যা ইন্সুলিন তৈরি হওয়া বন্ধ করতে বলে। এই হরমোন রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজন। যাদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস আছে তাদের প্রতিদিন ইন্সুলিন নিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকে এই রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে বড়বেলাতেও হতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে চিকিৎসকরা এখনও জানে না এর থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
টাইপ টু ডায়াবেটিস সাধারণের মাঝে বেশি দেখা যায়। এই অবস্থায় শরীর ইন্সুলিনের প্রতি সাড়া দিতে পারে না; ফলে রক্তের শর্করা সাধারণ মাত্রায় থাকে না। টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস খুব দ্রুত বিকশিত হলেও টাইপ টু ডায়াবেটিস হতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। অনেকেই সেটা পরীক্ষায় ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত টের পান না।
পাশাপাশি পঁয়ত্রিশের ওপরে বয়সিদের টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। স্থূলতা, অতিরিক্ত ওজন এবং অলস জীবনযাপন এই রোগ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান।
তৃতীয় ডায়াবেটিসের ধরনের নাম হল ‘জেস্টেইশনাল’ বা গর্ভধারণকাল ডায়াবেটিস। যেসব নারীর আগে ডায়াবেটিস ছিল না তাদের গর্ভধারণকালে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। তারপর সন্তান জন্ম দেওয়ার পর সমস্যা চলে যায়। তবে এই অবস্থা যাদের হয় তাদের পরে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
প্রতিরোধের উপায়
এই বিষয়ে ডা. ওয়েন বলেন, “প্রথমেই বুঝতে হবে প্রিডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে কি-না। এটা হল ডায়াবেটিস হওয়ার আগের অবস্থা। আর এটা চিকিৎসক পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন। তাই স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, বিশেষ করে যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন এবং বয়স যাদের ত্রিশ পেরিয়েছে।”
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাই হল ডায়াবেটিস প্রতিহত করার একমাত্র উপায়।
এর মধ্যে রয়েছে- সপ্তাহে দেড়শ মিনিট শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করা। যারা দেড়শ মিনিট পারবেন না, তাদের যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করতে হবে। একেবারেই ব্যায়াম না করার চাইতে কিছুটা করাও ভালো।
ছাড়তে হবে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার। খেতে হবে পূর্ণ শষ্য, ফল, সবজি, বাদাম এবং মটর ধরনের খাবার। আর অবশ্যই কমাতে হবে মিষ্টি পানীয় পান।
স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখাটাও ডায়াবেটিস হওয়ার থেকে রক্ষা করতে পারে। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
এছাড়া উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থেকে ডায়াবেটিস হতে পারে।
তাই স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দৈনিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়া জরুরি।
আর ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, ছাড়তে হবে। কারণ ধূমপানের কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
ইতোমধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে
যাদের এরই মধ্যে ডায়াবেটিস হয়ে বসে আছে, তাদের ক্ষেত্রে ডা. ওয়েন’য়ের পরামর্শ হল- স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিক নিয়ে মেনে চলা।
তিনি বলেন, “পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন- উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরল থাকলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”