‘ভিশন-২০২১’ প্রচারণাকে সামনে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২০২১ সালের আগেই সেই স্বপ্ন এখন অনেকখানি বাস্তবে পূরণ হয়েছে। বলা হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলে তার সফল বাস্তবায়নের রূপকার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
২০১০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিয়মিত সদস্য পদ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার সেই মেয়াদেই অবৈতনিক এবং খণ্ডকালীন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয় জয়কে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এরপর থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন করে উদ্যম সৃষ্টি হয়।
শিক্ষা-অভিজ্ঞতার মিশেল
সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন। ঐতিহ্যবাহী রাজনীতির ইতিহাস থাকা পরিবারের সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এরপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক প্রশাসন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষে একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠিত করেন জয়। হয়ে ওঠেন একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা।
দেশের আইসিটি খাত সংশ্লিষ্টদের মতামতও, আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা আর পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা; এই দুইয়ের মিশেলেই দেশের আইসিটি খাতের এমন তড়িৎ উন্নতিতে সফল নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
ভিশনারি লিডার
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুব কাছ থেকে দায়িত্ব পালন করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। তরুণ এই রাজনৈতিক কর্মীর চোখে সজীব ওয়াজেদ জয় একজন ‘ভিশনারি লিডার’। পলক বলেন, তিনি ৫-১০ বছর আগের ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন আর সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করেন। তার পরামর্শেই ২০০৯ সালেই আইসিটি পলিসি করা হয়। তখনই কিন্তু এই পলিসি বাস্তবায়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কী কী করতে হবে সেগুলো বলে দেন। অ্যাকশন প্ল্যান, টাইম ফ্রেম, মিশন-ভিশন, রোডম্যাপ এগুলো আমাদের স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেন। সেই অনুযায়ী কাজ করেই কিন্তু মাত্র ১৩ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব হয়েছে। পরিবর্তিন পৃথিবীর সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে সেটা তিনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আমরা এখন শ্রম নির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতির দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ইন্টারনেটকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ইউনিয়ন পর্যায়ের পাশাপাশি চর বা পার্বত্য অঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকা ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে আছে, কাজ চলছে সেগুলোতেও।
আইসিটি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে তোলা হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। ২০১৪ সালে উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে জেলা পর্যায়কে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনা হয়। ২০১৫ সাল থেকে সেটি উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ শুরু হয়। প্রায় তিন হাজার ইউনিয়নে বর্তমানে ফাইবার অপটিক সংযোগ রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা আছে, ২০২১ সাল নাগাদ দেশের সকল ইউনিয়ন অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছে দেওয়ার।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসির গত এপ্রিল মাসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১০ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন।
শিক্ষায় প্রযুক্তি
অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাখাতেও আইসিটি তথা প্রযুক্তির বিকাশের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। দেশের প্রায় আট হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব। সকল প্রতিষ্ঠানেই এই প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। ছোটবেলা থেকেই শিক্ষার্থীদের আইসিটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে আইসিটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের চাকরি এবং ব্যবসার বাজারে সুযোগ বৃদ্ধিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার। ইতিমধ্যে বুয়েট এবং চুয়েট এ এমন দুইটি সেন্টার চালু করা হয়েছে।
সার্বিক উন্নতি
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলানিউজকে বলেন, আইসিটি খাতের সার্বিক এখন পর্যন্ত যে উন্নতি তার মূল কৃতিত্ব সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের। যদি সংক্ষেপ করে বলি, দেশে বিপিও খাতে এখন ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আমরা রপ্তানি করে থাকি। এই খাতে ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে আইসিটি খাতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা এই খাতে আরও ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে জয় ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি সেবাগুলোকে আমরা অনলাইনে নিয়ে আসছি। প্রায় ৬০০ সরকারি সেবা এখন অনলাইনেই পাচ্ছেন নাগরিকরা। ২০১৫ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একসাথে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট জয় ভাই চালু করেন। এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
পলক আরও বলেন, জয় ভাই বিদেশে থেকে ‘স্টার্টআপ কালচার’ দেখে এসেছেন। তিনি দেশে উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তিনি ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন চালু করেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি দেশিয় স্টার্টআপকে আমরা সাপোর্ট করেছি। ১৩০টি স্টার্টআপকে সরাসরি সহায়তা করা হয়েছে। ইনোভেশন ফান্ড থেকে লক্ষাধিক স্টার্টআপকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় আড়াই হাজার দেশিয় স্টার্টআপ কিন্তু একরকমভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। দেশে এখন মিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশনের স্টার্টআপও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পরামর্শ দিয়ে থাকেন সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রধানমন্ত্রী দেশের ডিজিটাল উন্নয়নে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পেছনে জয় ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ওপর খুবই আস্থা রাখেন। আমরা আজ যে, বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদক দেশ হতে পেরেছি তার পেছনে নীতিনির্ধারণী যেসব কাজ আছে সেগুলো জয় ভাইয়ের পরামর্শে হয়েছে। প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে ৯৪টি যন্ত্রাংশের ওপর থেকে উচ্চ আমদানি শুল্ক উঠিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে ‘কনভিন্সড’ করেছেন জয় ভাই।
পলক আরও বলেন, আমরা যখন জয় ভাইয়ের কাছে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে যাই তখন আমাদের গভীর ‘স্টাডি’ করে যেতে হয়। কারণ তিনি সবকিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। এই খাতে তার যে মেধা সেটি আমাদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। কোনো প্রকল্প সম্পর্কে ওনার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে জনগণের টাকায় এটা করা হবে এর রিটার্ন কী? এখানে জনগণের সুফল এবং সুবিধাই তার জন্য রিটার্ন। এটা তিনি নিশ্চিত করে তবেই একটা প্রকল্প এগিয়ে নিতে বলেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দেশের আইসিটি খাতকে এগিয়ে নিতে এবং পূর্ণাঙ্গ-স্বয়ংসম্পূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুইটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। এর একটি হচ্ছে, ক্যাশলেস সমাজ গঠন অর্থাৎ সকল লেনদেন নগদের বদলে ডিজিটাল মাধ্যমে করা। অপরটি হচ্ছে সকল সরকারি সেবা অনলাইনে নিয়ে আসা।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাশলেস সমাজ গড়ে তুলতে পারলে দুর্নীতি কমে যাবে; সরকারের আয় বাড়বে। সবার টাকার একটা ‘ট্রেস’ থাকবে। আর সরকারি সেবাগুলোকে পুরোপুরি অনলাইনে নিয়ে আসতে হবে। জনগণ যেন ‘ইন লাইন’ (অপেক্ষমাণ) না থাকেন বরং ‘অনলাইন’ থাকেন সেই বিষয়ে জয় ভাই কাজ করে যাচ্ছেন।