ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুমোদন দিতে যাওয়া ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বহু প্রতিষ্ঠান।
আগ্রহীদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর, তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী উদ্যোগ, এমনকি ওষুধ কোম্পানি ও ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও।
প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স পেতে আবেদন এককভাবেও করেছে আবার যৌথ উদ্যোগও আছে।
লাইসেন্সের জন্য যত আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিদেশি দুই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ফিনটেক (প্রযুক্তিভত্তিক লেনদেন) ব্যবসার দক্ষতা রয়েছে।
কতগুলো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, সেটি এখনও প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আবেদনকারী কোম্পানিগুলো নিজেরাই যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে সংখ্যাটি ছয় এর কম না, তবে কোম্পানির সংখ্যা ২৫ এর বেশি।
নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা ও লেনদেন আরও সহজ করতে সরকারের ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ার উদ্যোগে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করে গত জুন থেকে। শুরুতে আবেদন করার শেষ সময় ছিল গত ১ অগাস্ট। সে সময়ের মধ্যে কোনো আবেদন জমা না পড়ায় পরে তা বাড়িয়ে ১৭ অগাস্ট করা হয়।
ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি: ডিজিটাল ব্যাংক আনছে দশ ব্যাংকের জোট
‘বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকে’ বিনিয়োগ করতে চায় ব্র্যাক ব্যাংক
ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বাংলালিংকের আবেদন
ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি কমিটি কাজ করবে।
শনিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, “আবেদন গ্রহণের সময় শেষ হওয়ায় এখন তা বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ করে দেখবে।”
কারা কারা আগ্রহী
সবার আগে ‘ডিজি টেন পিএলসি’ নামে দশ ব্যাংকের জোট ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই ১০টি ব্যাংক মিলিয়ে ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
সবার আগে এই জোটে থাকার কথা জানিয়ে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর ওয়েবসাইটে। জানানো হয়, ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’ তে তাদের শেয়ার থাকবে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) জানায়, ডিজি টেন ব্যাংকের ১০ শতাংশ মালিকানা নেবে তারা। ১১ দশমিক ১১ শতাংশ মালিকার বিপরীতে ১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে বেসরকারি পূবালী ব্যাংকও।
এই উদ্যোগে আরেক ব্যাংক ডাচ্-বাংলা। তারা ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পাবে।
ইস্টার্ন (ইবিএল), ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), প্রাইম ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের মালিকানা ও বিনিয়োগও একই পরিমাণ।
এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা মিলে জোটবদ্ধভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগের কথা জানায়। তারা আবেদন করলেও কী নাম হবে, সেটি প্রকাশ করা হয়নি।
বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ইউসিবির মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি উপায়ের নেতৃত্বে যে জোট আবেদন করেছে, তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’।
এই জোটে আছে বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ও মেঘনাও।
পাশাপাশি আছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আরামিট যারা মূলত ঢেউশিট উৎপাদন করে, আছে ওষুধ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস।
‘সঞ্চয় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’ নামে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংক। তাদের জোটেও বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে।
ডিজিটাল ব্যাংকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ কর ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পাবে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্য দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ার পেতে বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও-ও ডিজিটাল ব্যাংক পেতে আবেদন করেছে।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংক চেয়ে আবেদন করেছে ডিজিটাল আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি নগদও।
শেষ দিনে এসে আবেদন করে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক।
আবেদন করেছে রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি এবং ই-কমার্স লজিস্টিকস কোম্পানি ‘পাঠাও’, নাম দিয়েছে ‘পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক।’
গত এপ্রিল মাসে কোম্পানিটিকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক বাদে সব ব্যাংকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ১৩ ব্যাংকই নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) করেছে ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে।
তবে আরও ব্যাংক ও মোবাইল ফোন ভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে ডিএসইর মাধ্যমে পিএসই প্রকাশ করা হবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগ বা ব্যবসায় নতুন কিছু সংযোজিত হলে বিনিয়োগকারীদের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তাদের আগ্রহ কেন
ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে ডিজিটাল ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা কেন, এই প্রশ্নে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি সচিব জয়নুল আবেদিন বলেন, “নাভানা ফার্মার পরিচালকদের মধ্যে কয়েকজন ইউসিবি ব্যাংকেরও পরিচালক। তাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নাভানা ফারমার বিনিয়োগ পোর্টফলিওতে বৈচিত্র্য আনতে ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছে পর্ষদ।”
তার ভাষ্য, একাধিক খাতে বিনিয়োগ করলে নাভানা ফার্মার বিনিয়োগে ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করে কোম্পানিটি।
একই প্রশ্নে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অরামিট লিমিটেডের কোম্পানি সচিব সৈয়দ কামরুজ্জামান বলেন, “ব্যাংক ব্যবসা সব সময় লাভজনক থাকে। এজন্য পরিচালনা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগ করার। লেনদেন প্রযুক্তিভিত্তিক হলে সেখানে সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা পিএসআই দিয়ে জানিয়ে দেব।”
এই কোম্পানিটি ঢেউশিট উৎপাদন করে, যা সাধারণত কারখানা বা খামারে টিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরামিটের সচিব জানান, উপায় ডিজিটাল ব্যাংকের পাঁচ শতাংশ শেয়ার পেতে তারা ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করবেন।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস এর কোম্পানি সচিব মোস্তাক আহমেদ বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি বলেন, “পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপায় ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এর ১০ শতাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে।”
পাঠাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহিম আহমেদ বলেন, “পাঠাও শুধুমাত্র একটি ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট না, এটি একটি লাইফস্টাইল। শহুরে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের গিগ ইকোনমির ক্ষেত্রে পাঠাও এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে; এবার পাঠাও ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও আমূলে বদলে দেবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে আমরা ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করব।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, মূলধনের পরিমাণ কম হওয়ার প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক সেবার অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনের পরিমাণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, “যেখানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নীতি নির্ধারকরা সহায়তা দিচ্ছে, সেখানে মাত্র ১২৫ কোটি টাকায় ডিজিটাল ব্যাংক পাওয়া গেলে তো সব ধরনের ব্যক্তিরা আবেদন করবেই।”
ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কি না, সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি। বলেন, “ব্যাংকের সঙ্গে সুশাসনের সম্পর্ক জড়িত। ডিজিটাল ব্যাংকে কীভাবে গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে, কীভাবে তাদের ডেটা এবং আর্থিক গোপনীয়তা নিরাপত্তা দেবে তা ইস্যু হবে।
“কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে তদারকি করতে পারে না এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়। সাধারণ মানুষ ও নারীসহ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরের মানুষের কাছে ডিজিটাল ব্যাংকিং পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের স্বার্থ রক্ষা করার সক্ষমতা কি আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের?”
আরেক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর একই প্রসঙ্গে বলেন, “ব্যাংক কাদেরকে দিচ্ছে, তা বড় কথা। ১২৫ কোটি টাকা মাত্র মুলধন হওয়ায় সহজে আবেদন করতে পারবে যে কেউ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে না করবে? এখানেও তো ক্ষমতাবানরা রয়েছে। অনেকের সক্ষমতাই নেই, তাদের দিলে তো নতুন সমস্যা তৈরি করবে। অনেক এনবিএফআই (ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান) তো চলতে পারছে না।”
কী কী শর্তে ডিজিটাল ব্যাংক
নীতিমাল অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ থাকতে হবে ১২৫ কোটি টাকা। তবে এই অর্থ ধারের হলে চলবে না।
একেকজন উদ্যোক্তোর বিনিয়োগ হতে হবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সর্বশেষ সংশোধনী (২০২৩) এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্য বা প্রতিষ্ঠান, একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ক্রয় করতে পারবে না।
উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানির মালিকানা স্বত্বের শতকরা শতকরা পাঁচ ভাগের বেশি কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্য বা প্রতিষ্ঠান, একক বা যৌথভাবে হতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি লাগবে।
তবে সরকারের বেলায় এই ধারা প্রযোজ্য হবে না বলে ব্যাংক কোম্পানি আইনে উল্লেখ করা আছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানার বেলায়ও ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রযোজ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের ৫ শতাংশের বেশি মালিকানা পেতে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরুর পর ৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) এর মাধ্যমে। তবে এখানে শর্ত দেওয়া হয়, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা প্রাথমিক মূলধনের কম হতে পারবে না।
অর্থাৎ আইপিওর মাধ্যমে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা বা ওই সময়ে উদ্যোক্তাদের সরবরাহকৃত অর্থের সমপরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার ছাড়তে হবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাঝে।
উদ্যোক্তাদের শেয়ার ৩ বছরের পূর্বে হস্তান্তর করতে অনুমোদন দিতে পারবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
কীভাবে কী সেবা
নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে বাংলাদেশে। এই কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সার্পোট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এই কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে।
কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম/সিডিএম/সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকে গ্রাহক হিসাব খোলা হবে কেওয়াইসি পরিপালন করে অনলাইনে।
তাদের নিজস্ব কোনো এটিএম বুথ থাকবে না। হিসাব খোলার পর ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর এবং ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহক। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে একই পদ্ধতিতে।
লেনদেন সহজ করতে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউ আর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসরমান প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে ডিজিটাল ব্যাংক।
এই ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে, তবে বৈদেশিক লেনদেনের সুযোগ থাকবে সীমিত। তবে তারা বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণ ও এফসি হিসাব পরিচালনা করতে পারবে।
এই ব্যাংক কারও পক্ষে পেমেন্ট বা পরিশোধকারী ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারবে। বিদেশে লেখাপড়া, চিকিৎসা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে অনুমোদন সাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবে গ্রাহকের পক্ষে।
তবে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঋণ, বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে পারবে না।
এ ব্যাংক দেশের ভেতরে যে কোনো পর্যায়ের গ্রাহককে ঋণ দিতে পারবে। প্রান্তিক ও এসএমই খাতে ঋণ দিতে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে নীতিমালায়।
ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মত জামানত রেখে ঋণ দিতে পারবে। ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের পর্ষদে কমপক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ সদস্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশিষ্ট সদস্যদের ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের শক্তিশালী আইসিটি অবকাঠামো ও অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে। কমপক্ষে ‘টিয়ার থ্রি’ মানের ‘ডেটা সেন্টার’ এবং ভিন্ন সিসমিক জোনে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) থাকতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংক ক্লাউড পরিষেবা নিতে পারবে, তবে ক্লাউডের অবস্থান অবশ্যই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হতে হবে।
সব লেনদেনের তথ্য অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এনক্রিপ্টেড হতে হবে। আইসিটি অবকাঠামো অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো অডিট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করাতে হবে।
নির্ধারিত ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে গ্রাহকের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না ডিজিটাল ব্যাংক। গ্রাহকের কাছ থেকে এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাংক চাইবে না, যা গ্রাহকের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে। গ্রাহকের কাছ থেকে কোন কোন উদ্দেশ্যে কেমন তথ্য সংগ্রহ করবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে।