ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৪ জন ভিআইপিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্য, সচিব, রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা।
এসব বন্দির মধ্য থেকে ১০৮ জনকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। ২৬ জন এখনো ডিভিশন পাননি। কারাগারের খাতায় তারা (যারা ডিভিশন পাননি) বিশেষ বন্দি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছেন। কারা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
কারাগারগুলোয় যারা বিশেষ বন্দির তালিকায় আছেন, তাদের মধ্যে একজন সাবেক হুইপ, ২২ জন সাবেক সংসদ-সদস্য ও তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে ও সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর ইমাম, সাবেক সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সংসদ-সদস্য গোলাম কিবরিয়া, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, কামরুল আশরাফ খান পোটন, আব্দুর রউফ, রাগেবুল আহসান রিপু, আব্দুস সোবহান মিয়া (গোলাপ)।
আরও আছেন- কাজী জাফর উল্ল্যাহ, আহম্মদ হোসাইন, শাহে আলম, সাদেক খান, হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সেলিম আলতাফ জর্জ, ড. ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দীকি রোজী, সাবেক হুইপ মাহবুব আরা গিনি, সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুর রহমান বদি, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আলী আজম মুকুল, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক এএসপি রফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য এএমএ লতিফ, জান্নাত আরা হেনরি, রশিদুজ্জামান মোড়ল, সাবেক সংসদ-সদস্য এসএম তানভীর আরাফাত এবং রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর ইমামকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে। গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় পরদিন তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। হাজী সেলিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ১৩ নভেম্বর রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন গুলশান থানার একটি হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ-সদস্য ১৪ নভেম্বর গোলাম কিবরিয়া টিপুকে রাতে কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হাতিরঝিল থানার একটি মামলায় পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে ১৫ ডিসেম্বর রাতে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেফতার নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য কামাল আশরাফ খান পোটনকে ১৯ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের (কুমারখালী-খোকসা) সাবেক সংসদ-সদস্য আবদুর রউফকে গ্রেফতার করে র্যাব। ৬ নভেম্বর থেকে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বগুড়া সদর আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রাগেবুল আহসান রিপুকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে ১৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে র্যাব। রিপুর বিরুদ্ধে বগুড়ার বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে আগস্টে গ্রেফতার করা হয়। তিনি একসময় সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ আছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহকে সেপ্টেম্বরে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ আছেন।
আগস্টে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ উল্লাহকে। তিনিও এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় করাগার-২-এ আছেন। একই কারাগারে থাকা শাহে আলমকে গ্রেফতার করা হয় ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে। গ্রেফতারের আগে তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হন। মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাদেক খান কারাগারে আছেন ২৯ আগস্ট থেকে।
লালবাগ থানার মামলায় হাজী মোহাম্মদ সেলিম কারাগারে আছেন ৪ সেপ্টেম্বর থেকে। মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে আছেন সাবেক সংসদ-সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। ডিভিশন না পাওয়া আরও যারা বিশেষ বন্দির মর্যদা পেয়েছেন, তাদের ২০ আগস্ট থেকে ২৬ ডিসেম্বর সময়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি হিসাবে এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সংসদ-সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম, শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজব জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টারের সাবেক মহাপরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নৌবাহিনীর সাবেক কমোডর মনিরুল ইসলাম, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম সোহায়ইল, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক উপমন্ত্রী আদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।
সাবেক মন্ত্রী মাহবুব আলী, ফরহাদ হোসেন, ইমরান আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, জাকির হোসেন, সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, উবায়দুল মোকদাদির চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুগ্মসচিব একেএম জি কিবরিয়া মজুমদার, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবেক মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আমির হোসেন আমু, আব্দুস শহীদ, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শহিদুজ্জামান সরকার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইসমাইল হোসেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সংসদ-সদস্য সাফিয়া খাতুন, সাবেক সংসদ-সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা ওরফে শিউলি আজাদ, বেসিক ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মো. আলী চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. কুদ্দুসুর রহমান, সাবেক পুলিশ উপমহাপরিদর্শক মিজানুর রহমান, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মাইনুল হক, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান, ডিএমপির সাবেক উপপুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, পুলিশ সুপার শাহেন শাহ, পুলিশ সুপার মো. জুয়েল রানা, রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম, তানজিল আহম্মেদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য বখতিয়ার আলম রনি, সহকারী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক আইজপি মো. শহিদুল হক, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মশিউর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল হাসান, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ইফতেখার মাহমুদ, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহেল কাফি, পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সাবেক ক্যাপ্টেন এআই সবুজ আহমেদ, সাবেক লেফটেন্যন্ট কর্নেল মো. তানভীর ইসলাম।
সাবেক মেজর এসএম মনিরুজ্জামান, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ওরফে শাহাবুদ্দিন মোল্লা, পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক সংসদ-সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজ, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক সংসদ-সদস্য মাজহারুল ইসলাম সুজন, দাবিরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, মো. আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ, কেডিএস গ্রুপের মালিকের ছেলে ইয়াসিন রহমান ওরফে রহমান ইয়াসীন।
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, সাবেক সংসদ-সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, আয়েশা ফেরদৌস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক আলী অমি, সাবেক সংসদ-সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ, সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কায়সার দস্তগীর, সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক সংসদ-সদস্য মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, যাদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে, তারা কারাবিধি অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, কারাবিধিতে বিশেষ বন্দি বলে কিছু নেই। আদালত যাদের ডিভিশন মঞ্জুর করেননি, তাদের সাধারণ বন্দি হিসাবেই দেখা হচ্ছে।