ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল সংসদের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনার বিচার চেয়ে প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিতে এসে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যরা ‘ডিম হামলার’ শিকার হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে।
ভিপি নুর অভিযোগ করেছেন, হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে। প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস এম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল।
অন্যদিকে হামলার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ভিপি নুর ও তার সমর্থকরা। সেখানে তিনি রাতের মধ্যেই পুলিশ ডেকে প্রত্যেক হলের বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করা এবং এসএম হলের হামলার বিচার দাবি করেন। যতক্ষণ দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ সেখানে বসে থাকবেন বলে জানান তিনি।
তার সঙ্গে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসানসহ আরও অনেকে অবস্থান নিয়েছেন।
সেখানে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসনের এক প্রকার নীরব সম্মতি ছিলো। যার ফলে ছাত্রলীগ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফরিদকে রক্তাক্ত করা এবং এর বিচারের দাবিতে অভিযোগ দিতে গেলে আমাদের ওপর দুই দফায় হামলা হয়।
নুর বলেন, আজকে রাতের মধ্যে পুলিশ ডেকে প্রত্যেক হলের বহিরাগত ও অছাত্রদের বের করতে হবে। আর আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার বিচার করতে হবে। নয়তো আমরা এখানে সারারাত বসে থাকবো।
রাশেদ খান বলেন, নুর, আখতার, ইমি ও বেনজিরের ওপর হামলা ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি।
এ বিষয়ে শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, তারা শুধু আমার পিঠে ডিম ছুঁড়েনি, গায়েও হাত দিয়েছে। এ ঘটনার বিচার হতে হবে। ইমি বলেন, আমরা যারা প্রভোস্টের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
তবে নুরদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এস এম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহ্মেদ রাসেল। তিনি বলেন, ফরিদের ওপর হামলার অভিযোগটি মিথ্যা। সে মাদকসেবী। এজন্য প্রসাশন তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। সন্ধ্যায় নুররা ফরিদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিতে আসে। এ সময় তাদের আমরা চলে যেতে বলি। এরপরও তারা না গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হল থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, ডাকসুর ভিপি ফরিদ হাসান নামে এক ছেলেকে মারধরের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে আসেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তিনি মিছিল নিয়ে হলে প্রবেশ করেছেন। পরে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আমি ঘটনাস্থলে আসি। তার সঙ্গে কথা শেষ করে আমি তাদেরকে হল গেইট পর্যন্ত রেখে আসি।
ঘটনার বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সহ সভাপতি (ভিপি) এম এম কামাল উদ্দিন বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে হলের এক শিক্ষার্থীকে মাদক সেবনের অভিযোগে বের করে দেওয়া হয়। সেই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ জমা দিতে মঙ্গলবার বিকেলে বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ মিছিল নিয়ে হলে আসেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তবে তিনি হল সংসদকে এই বিষয়ে কিছুই অবহিত করেননি।
তিনি বলেন, আমরা তার কাছে হলে আসার কারণ জানতে চাই। পরে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার জন্য হলে অপেক্ষা করতে থাকেন। প্রাধ্যক্ষ আসলে তার সঙ্গে কথা বলে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। পরে হল গেটে কে বা কারা তার গায়ে ডিম মেরেছে আমরা জানি না। হল প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে জড়িতদের বের করবে।