জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় অসঙ্গতি দূর করতে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জনগণের মধ্যে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার প্রতিকার ও প্রতিবিধানের দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার ড. কামাল হোসেনের কাছে চিঠিটি হস্তান্তর করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক। চিঠিটি অবগতির জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকেও দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্টে যেসব অসঙ্গতি আছে, তা সঠিকভাবে নিরসন না হলে আগামী এক মাসের মধ্যে অর্থাৎ ৮ জুন তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগ করবে।
চিঠির বিষয়ে হাবিবুর রহমান তালুকদার সমকালকে বলেন, দেশের ক্রান্তিকালে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করতে চান। নিজেদের অনেক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে এগুলোর সমাধান দরকার। এসব বিষয় নিয়ে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি ঐক্যফ্রন্টকে কার্যকর করতে সবার সহযোগিতা চান।
চিঠিতে বলা হয়, জাতির বৃহত্তর প্রযোজনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। দেশের রাজনৈতিক অবক্ষয়ের মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ৫ নভেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এই ফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত হয়।
চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময় ঐক্যফ্রন্টের অনেক কর্মকাণ্ডই স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোয় ব্যর্থতা, প্রহসনের নির্বাচনী নাটক প্রত্যাখ্যান করার পরও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের মোকাব্বির খানের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া এবং তাকে গেট আউট বলে মতিঝিলের চেম্বার থেকে বের করে দেওয়ার পরও সর্বশেষ গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে তার অংশগ্রহণ নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক বিভ্রান্তি দেখা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, ঐক্যফ্রন্টের এসব কার্যক্রমের জবাব রাস্তাঘাটে দেওয়া যাচ্ছে না। দেশে নারী ধর্ষণ-হত্যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এসবের প্রতিবাদে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ৩০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নুসরাত হত্যা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ডাকা শাহবাগ চত্বরে গণজমায়েত কেন এবং কীভাবে বাতিল করা হয়েছে সেসবের বিন্দুবিসর্গও জানা যায়নি। সর্বশেষ বিএনপির ছয় এমপির একজন শপথ নেওয়ায় তাকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে চারজনকে স্বাগত জানানো এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকা নিয়ে জাতীয় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে- এসব বিষয়ের যথাযথ প্রতিকার ও প্রতিবিধান না হলে আগামী ৯ জুন অথবা পরবর্তী দু-একদিনের মধ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।