মায়ের নামাঙ্কিত জার্সি পরে মাঠে নেমেছিল রাজশাহী কিংসের ক্রিকেটাররা। ম্যাচের আগে তাদের কণ্ঠে ছিল প্রত্যয়, জয় দিয়ে উপলক্ষ্যটি উৎসর্গ করতে চান মায়েদের। সেই প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন দেখা গেল পারফরম্যান্সে। হারিয়ে দিল তারা অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা ঢাকা ডায়নামাইটসকে।
এবারের বিপিএলে পঞ্চম ম্যাচে এসে প্রথম হারের স্বাদ পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। রাজশাহী তাদের হারিয়ে দিয়েছে ২০ রানে।
সিলেটে বুধবার খুব বড় পুঁজি গড়তে পারেনি রাজশাহী। প্রায় ৫ বছর পর টি-টোয়েন্টি ও ৬ বছর পর বিপিএল খেলতে নেমে ৩১ বলে ৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন মার্শাল আইয়ুব। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় রাজশাহী ২০ ওভারে তুলতে পারে ১৩৬ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেই রানকেই তারা প্রমাণ করেছে যথেষ্ট। ঢাকা থমকে গেছে ১১৬ রানে।
রাজশাহীর চমকের শুরু ছিল এ দিন একাদশ দিয়েই। সৌম্য সরকার ও মুমিনুল হকের জায়গা হয়নি একাদশে। দুজনের কেউই রান পাননি আগের ম্যাচগুলোয়। এরপরও এমন দুজনকে বাইরে রাখা, শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শালকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। মরিয়া রাজশাহী হেঁটেছে সেই পথেই।
মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন মৌসুমে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শাহরিয়ার। আন্দ্রে রাসেলের ফুলটসে ক্যাচ দিয়ে মিরাজ ফেরেন ১ রানেই।
তিনে নামেন মার্শাল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর বিপিএলে তার প্রথম ম্যাচ, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
তার ব্যাটিং মূলত বড় দৈর্ঘ্যের উপযোগী বলে মনে করা হয় বলেই এই লম্বা সময় সুযোগ পাননি। কিন্তু এ দিন মার্শাল দেখালেন তার অন্য রূপ। চমকে দিলেন দারুণ সব শটে। আন্দ্রে রাসেলের এক ওভারে দুটি দৃষ্টিনন্দন চারের পর ছক্কা মারলেন হুক করে। বাঁহাতি স্পিনার আসিফ হোসেনকে ছক্কায় ওড়ালেন মাথার ওপর দিয়ে।
আরেক পাশে শাহরিয়ার ছিলেন উইকেট আগলে। গতি দিতে পারছিলেন না ইনিংস। তবে টিকে থাকায় গড়ে ওঠে জুটি।
চার বলের মধ্যে দুটি বাউন্ডারিতে যখন হাত খোলার চেষ্টা করছেন শাহরিয়ার, তখনই ভাঙে জুটি। নারাইন এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে।
২৭ বলে ২৫ করে আউট হন শাহরিয়ার। ভাঙে ৫৩ বলে ৭৫ রানের জুটি। তিন চার ও দুই ছক্কায় ৩১ বলে ৪৫ করেন মার্শাল।
ওই ওভারে উইকেট আসতে পারত আরও একটি। রায়ান টেন ডেসকাটকে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় ঢাকা। আলট্রা এজে দেখা যায় বল স্পর্শ করেছিলেন ডেসকাটের গ্লাভস। দীর্ঘক্ষণ দেখার পর গ্লাভসে লেগেছে নিশ্চিত হয়ে তৃতীয় আম্পায়ার নটআউট ঘোষণা করে দেন। নিয়ম অনুযায়ী, ডিআরএসর আবেদন যে আউটের জন্যই করা হোক, সম্ভাব্য সব আউটই যাচাই করে দেখতে হবে রিপ্লেতে। এলবিডব্লিউ না হলেও ডেসকাট কটবিহাইন্ড হয়েছিলেন কিনা, সেটি আর দেখেননি তৃতীয় আম্পায়ার। ঢাকার ফিল্ডাররা জোর প্রতিবাদ জানান। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
ডেসকাট অবশ্য সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। ফিরে গেছেন ১৬ বলে ১৬ রান করে। খুব সুবিধে করতে পারেননি অন্যরাও। জাকির হাসান ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগালেও ফেরেন ১৮ বলে ২০ রান করে। রাজশাহীর ইনিংস তাই বড় হয়নি খুব।
ইনিংস বিরতিতে সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিল শক্তিশালী ঢাকা। কিন্তু রাজশাহীর বোলাররা বদলে দিল হিসাব।
রান তাড়ায় ঢাকা তিন উইকেট হারায় প্রথম চার ওভারেই। নারাইনকে ঝড় তুলতে দেননি মিরাজ। হজরতউল্লাহ জাজাইকে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করেন ইসুরু উদানা। তিনে নেমে আন্দ্রে রাসেল একটি চার ও ছক্কা মারলেও তাকে ফেরান সানি।
রনি তালুকদারকে নিয়ে সাকিব আল হাসান চেষ্টা করছিলেন ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু সানিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন সাকিব। সানি পরে বোল্ড করে দেন রনিকেও। একাদশ ওভারে ঢাকার রান তখন ৫ উইকেটে ৫৩।
ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নাঈমকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন পোলার্ড। কিন্তু ক্রমেই বাড়তে থাকে প্রয়োজনীয় রান রেট। শেষ পর্যন্ত সেই দাবি মেটাতে পারেননি দুজন। ১৮ বলে ১৭ করে ফেরেন নাঈম, ২১ বলে ১৪ পোলার্ড।
ঢাকার সম্ভাবনারই তখনই সমাপ্তি। শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহানের ১৪ বলে ২১ রানের ইনিংস ব্যবধান কমিয়েছে কিছুটা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (মিরাজ ১, শাহরিয়ার ২৫, মার্শাল ৪৫, ডেসকাট ১৬, জাকির ২০, ইয়োঙ্কার ৯*, প্রসন্ন ২, উদানা ৩*; রাসেল ৩-১-১৭-১, রুবেল ৩-০-১৭-০, সাকিব ৪-০-২৯-১, নারাইন ৪-০-১৯-৩, আসিফ ২-০-১৫-০, আলিস ৪-০-২৯-১)।
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১১৬/৯ (জাজাই ৬, নারাইন ১, রাসেল ১১, রনি ১৪, সাকিব ১৩, পোলার্ড ১৩, নাঈম ১৭, সোহান ২১, রুবেল ০, আসিফ ৬*, আলিস ০*; উদানা ৪-০-৩৬-১, মিরাজ ৩-০-১৮-২, সানি ৪-১-৮-৩, রাব্বি ৪-০-২৪-১, মুস্তিাফিজ ৪-০-১৯-১, প্রসন্ন ১-০-৯-০)।
ফল: রাজশাহী কিংস ২০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আরাফাত সানি