যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বায়ুমান মনিটরে গত শনিবার বিকেলে ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ দেখানো হচ্ছিল ৬৮ (পিএম ২.৫)। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, এই সূচক খুব কম সময়ই ঢাকায় ২০০ (পিএম ২.৫) বা তার কাছাকাছি থাকে। স্বাভাবিক সময়ে ২০০ বা তার নিচে নামলেই তারা স্বস্তিবোধ করেন। কিন্তু করোনার প্রভাবে ২৬ মার্চ থেকে টানা সরকারি ছুটির কারণে ঢাকার বায়ুমান এখন ১০০-এর নিচেই থাকছে। এপ্রিলের শুরুতেও যা ছিল ১০০-এর ওপরে, যেটা অস্বাস্থ্যকর।
বায়ুমান ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকার অর্থ ‘বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য। তবে কিছু দূষণকারী পদার্থ থাকার জন্য অস্বাভাবিক স্পর্শকাতর অল্পসংখ্যক মানুষের জন্য এটি মাঝারি ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক গতকাল বলেন, সাধারণত কোনো শহরেই বায়ুমানের এই সূচক পঞ্চাশের নিচে নামে না। ঢাকায় সাধারণত ২০০ বা তার কাছাকাছি থাকে। ২০০-এর নিচে নামলেই তারা স্বস্তিবোধ করেন।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘দূতাবাসের বায়ুমান মনিটর বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ণ বস্তুকণার মাত্রা পরিমাপ করে। একে সাধারণভাবে বলা হয় পিএম ২.৫। কারণ, ঢাকায় দূতাবাস প্রাঙ্গণের বস্তুকণাগুলোর ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রন বা তার চেয়েও ছোট। তবে একটিমাত্র মনিটরিং কেন্দ্রের উপাত্ত গোটা নগরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে সংগৃহীত বায়ুমানের তথ্য একই শহরে স্থাপিত অন্যান্য মনিটর থেকে আলাদা হতে পারে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের কেইস প্রকল্পের অধীনে ঢাকায় বসানো বায়ুমান মনিটরগুলো চালু থাকলেও তার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, ২২ মার্চের পর তারা তথ্য আপডেট করেননি। অফিস খোলার পরে বকেয়া ডাটা সংগ্রহ করে ফের আপডেট করা হবে। তিনি বলেন, জেলা পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় অফিসের সার্ভারে আনতে হয়। পরে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। অফিস বন্ধের কারণে আপডেট তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
২২ মার্চের প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ুমান দেখানো হয়েছে ১৫৮, যা অস্বাস্থ্যকর। ওই দিন সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি ছিল রাজশাহীতে ৮৮। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে মানুষ এখন ঘরবন্দি, যানবাহন চলাচলও সীমিত; তাই বায়ুমান পরিস্থিতি ভালো।
জিয়াউল হক জানান, যানবাহন চলাচল এবং নির্মাণকাজ কমে যাওয়ার কারণে দূষণের মাত্রা কমেছে। ট্রাক চলার কারণে দিনের তুলনায় রাতে একটু বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে ওই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১-১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। একিউআই ১০১-১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১-২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০১-৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ পেরিয়ে গেলে সেই বাতাসকে বিপজ্জনক ধরা হয়। বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে বায়ুমান সাধারণত ভালোই থাকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কেইস প্রকল্পের একিউআই আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত বায়ুমান সূচকে ঢাকার বাতাসের মান ছিল ২০০-এর বেশি। কোনো কোনো দিন তা ৩০০ ছাড়িয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একিউআই বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬৩।
মসিউর রহমান খান